জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতি চোখ বন্ধ রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে ‘বিশ্ব বিবেককে চ্যালেঞ্জ করে এমন একটি নৈতিক সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে ভিডিও-লিংক ভাষণে গুতেরেস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক অংশ থেকে আমরা যে মাত্রার উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা দেখতে পাই তা আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না - সহানুভূতির অভাব, সত্যের অভাব, মানবতার অভাব’।
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি মানবিক সংকট নয়। এটি একটি নৈতিক সংকট যা বিশ্ব বিবেককে চ্যালেঞ্জ করে। আমরা প্রতিটি সুযোগে আমাদের আওয়াজ তুলে ধরব’।
হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধের মধ্যে মার্চ মাসে ইসরাইল ত্রাণ অবরোধের আওতায় থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে দুর্ভিক্ষের ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সাহায্যকারী সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে। দুই মাস পরে সেই অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা হয়েছিল।
তারপর থেকে সাহায্যের ধারা ইসরাইলি এবং মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বিতরণ ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির সভাপতি মিরজানা স্পোলজারিক শুক্রবার বলেছেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তার জন্য কোনও অজুহাত নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ এবং মানবিক মর্যাদার অবনতির মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে সমস্ত আইনি এবং নৈতিক উভয়ই গ্রহণযোগ্য মান অতিক্রম করেছে ।
স্পোলজারিক বলেন, গাজায় আইসিআরসির ৩শ’ ৫০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছে। যাদের অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি খুঁজে পেতে লড়াই করছেন।’
সাহায্যকারী সংস্থা এবং জাতিসংঘ জিএইচএফের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এটি ইসরাইলি সামরিক লক্ষ্যগুলোকে সহায়তা করার অভিযোগ এনেছে।
৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন গুতেরেস। হামাসের ওই হামলার ফলে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এরপর যে মৃত্যু ও ধ্বংসের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা কোনও ভাবেই ন্যায্যতা দিতে পারে না। এর মাত্রা এবং পরিধি আমরা সম্প্রতি যা দেখেছি তার চেয়েও বেশি,‘ তিনি বলেন।
গুতেরেস ২৭শে মে থেকে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করে, তখন থেকে খাদ্য সহায়তা পেতে চেষ্টারত ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপের প্রয়োজন: একটি তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সকল জিম্মির তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তি, এবং তাৎক্ষণিক ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশাধিকার।’ তিনি এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ইসরাইল এবং হামাস যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছায়, তাহলে জাতিসংঘ গাজায় ‘নাটকীয়ভাবে মানবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি’ করতে প্রস্তুত।