বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেভাবে ইরানের কাছে ধরাশায়ী হলো ইসরায়েল

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৫ জুন, ২০২৫ ২১:২২

টানা ১২ দিনের বিমান হামলার পর ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে তার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। যুদ্ধবিরতির পর দখলদার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘লক্ষ্য পূরণের’ দাবিকে ‘গোলমেলে’ আখ্যা দিয়ে আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে ‘অরি গোল্ডবার্গ’ তুলে ধরেছেন ইসরায়েলের কৌশলগত সীমাবদ্ধতা এবং ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা।

অরি গোল্ডবার্গ দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইরান এবং ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন। তিনি একজন ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার। ওই প্রবন্ধে গোল্ডবার্গ দেখিয়েছেন, ইসরায়েল ইরানের ‘সরকার পরিবর্তন’ ও দেশটির ‘পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানাসহ বেশ কয়েটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধ শুরু করলেও শেষমেশ কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সম্ভবত এর উত্তর হলো ‘না’। মনে করা হচ্ছে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত ফোর্ডো স্থাপনা থেকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে নিয়েছিল। এই উপাদানগুলোই পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে জরুরি অংশ। তাই, পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি করেছে, সেটাও পরিষ্কার নয়। ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পেরেছিল বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা, ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের হামলায় এর বেশি কোনো সাহায্য করেনি। হামলার ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, তা বের করা কঠিন হবে, কারণ ইরান সম্ভবত বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। সহজ কথায় বলতে গেলে- ইসরায়েল যা চেয়েছিল তার উল্টো ফল হয়েছে। ইসরায়েল ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সামরিক নেতাদের হত্যা করে সরকারবিরোধী বিদ্রোহ শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, শত্রুর ঊর্ধ্বতন নেতাদের হত্যা করলে তাদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু এই কৌশল কখনো সফল হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু, যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল; কিন্তু সেটার সঙ্গে লেবাননের ভেতরের রাজনীতিরও অনেক সম্পর্ক ছিল। অন্য সব ক্ষেত্রে ইসরায়েলের এমন হত্যাযজ্ঞ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। ইরানের ক্ষেত্রে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল যদিও ইরানি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসির) সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করেছে, যারা সম্ভবত বর্তমান ইরানি রাজনীতির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও একই সঙ্গে ইসরায়েলের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত, তবুও অনেক ইরানি যারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ও বিশেষ করে আইআরজিসির ঘোরবিরোধী, তারাও এই পরিস্থিতিতে সরকারকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে। ইরানিরা শুধু ‘সরকার’ নয়, বরং পুরো ইরানকেই আক্রমণের মুখে দেখেছিল। ইসরায়েলের ‘শাসনের প্রতীক’ হিসেবে কিছু স্থানে বোমা ফেলার চেষ্টাও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। তারা কুখ্যাত এভিন কারাগারে বিমান হামলাকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামের অংশ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসরায়েলের বোমা হামলা উল্টো বন্দিদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছিল, কারণ কর্তৃপক্ষ তাদের অনেককে অজানা জায়গায় সরিয়ে নিয়েছিল। ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরআইবিতে বোমা হামলাও অযৌক্তিক ছিল। ইসরায়েল দাবি করেছিল, এটি সরকারের প্রচার বন্ধ করার চেষ্টা। তবে অনেক ইসরায়েলিই বলেছেন, এই হামলা ইরানিদের জন্য ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে হুমকি দেওয়ার অজুহাত তৈরি করে দিয়েছে। যদি ইসরায়েল তাদের ঘোষিত যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে, তাহলে কি তারা অন্তত বিশ্বকে নিজেদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে? যাতে সবাই গাজার কথা ভুলে যায় ও ইসরায়েলকে আবারও ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধে লড়াইকারী হিসেবে দেখতে পায়? এটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল। ফলে তারা আন্তর্জাতিক আইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে। তবে ট্রাম্প ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেননি। হামলার পরপরই মার্কিন কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে। বোমা হামলার আগে ও পরে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির আকাঙ্ক্ষা বারবার প্রকাশ করেছেন, যেখানে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মনে হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে তার নিজের স্বার্থ ও উপসাগরের মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করেছেন। যদিও কিছু বিশ্বনেতা, বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ মার্কিন হামলা এবং ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করেছেন, তবুও কেন ইসরায়েলের কঠোর দাবি, যেমন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষমতা না থাকার কথা মেনে নেয়নি। বিশ্ব এখন ‘পারমাণবিক অস্ত্র নয়’ নীতিতে ফিরে এসেছে, যা ইরানও মেনে চলতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ইরানকে ব্যবসার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি পরাজয় ও ইরানের জন্য একটি বিজয়। ইসরায়েলের ভেতরের ক্ষয়ক্ষতিও বিবেচনা করা দরকার। ইসরায়েল দ্রুত ইরানের আকাশসীমায় আধিপত্য বিস্তার করে প্রায় ইচ্ছামতো হামলা চালিয়েছে। তবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বারবার ইসরায়েলের বিখ্যাত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পেরেছে, ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলসহ সারাদেশে আঘাত হেনেছে। এতে অভূতপূর্ব সংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলের কাছে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব ছিল ও দ্রুত সেগুলো তৈরি করারও কোনো আশা ছিল না। ইসরায়েলি অর্থনীতি দ্রুত স্থবির হয়ে পড়ছিল। এটিও ইরানের জন্য আরেকটি জয়। শত শত হতাহত এবং দেশজুড়ে অবিরাম বোমাবর্ষণে অনেক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ইরান যুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু বিশাল ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে পড়েনি। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সফলভাবে ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। ইরানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়নি (কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এটিকে ইসরায়েলি হামলার শিকার হিসেবে দেখেছে)। ইরানের পাল্টা আক্রমণের বিকল্পগুলো খুব বেশি সীমিত ছিল না। কাতারে তার সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন হামলার ‘প্রতিশোধ’ সম্পর্কে আগাম সতর্ক করে ইরান সফলভাবে উত্তেজনা কমাতে পেরেছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হচ্ছে দেখে ইসরায়েলকে হামলা না করার জন্য সতর্ক করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে ছিল ইরান। ইরান এখন এমনভাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা তারা পছন্দ করে- এখনো শক্তিশালী অবস্থানে আছে ও ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময়।

এ বিভাগের আরো খবর