বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানে হামলায় শতাধিক ‘সন্ত্রাসবাদী’ নিহতের দাবি ভারতের

  • ইউএনবি   
  • ১২ মে, ২০২৫ ১১:০৭

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ও দেশটির অন্যান্য অংশে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ শতাধিক ‘সন্ত্রাসবাদী’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারত।

রবিবার (১১ মে) দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন ভারতের সামরিক কার্যক্রমের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই।

তিনি জানান, পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটিও ছিল বলে ‍উল্লেখ করেন তিনি।

লস্কর-ই-তৈয়বা নামক সংগঠনটি ভারত সরকার জঙ্গি সংগঠন হিসেবে গণ্য করে এবং দেশটির অভ্যন্তরে ও কাশ্মিরে একাধিক হামলার জন্য এদেরকেই দায়ী মনে করে।

রাজিব ঘাই আরও বলেন, ‘আমরা তাদের (লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য) পুরোপুরি অপ্রস্তুত অবস্থায় ধরেছিলাম।’

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে দুপক্ষই একে অপরের কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এরপরই গত ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।

যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, উভয় দেশ স্থল, জল এবং আকাশপথে সব ধরনের সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে রাজি হয়।

ভিন্ন ভিন্ন হতাহতের সংখ্যা

ঘাই জানান, গত কয়েকদিনে এলওসি বা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর লড়াইয়ে অন্তত ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন, পাশাপাশি ভারতের পাঁচজন সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেন, তাদের পাল্টা হামলায় ৪০-৫০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন।

ভারতের এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী জানান, পাকিস্তান থেকে আসা একাধিক ড্রোন অনুপ্রবেশ ব্যর্থ করা হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানি বিমান ঘাঁটিতে আরও বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

তবে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানের দাবির বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেননি। তাছাড়া, ভারতীয় বাহিনীও কয়েকটি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করেছে বলে জানান তিনি, যদিও তার বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে , তারা কোন পক্ষের দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির পরও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার সহিংসতা শুরুর খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মির ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে গোলাগুলি ও ড্রোন দেখা গেছে বলে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল সংঘর্ষ কিছুটা কমে আসলেও স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক রয়ে গেছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুঞ্চ জেলার এক শিক্ষার্থী সোসান জেহরা বলেন, ‘পুরো এলাকা বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। শেল পড়তেই মানুষ দৌড়ে পালাচ্ছিল।’

পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন নীলম উপত্যকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহিদ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির পর আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু এখন আবার অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে।’

কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

শনিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে উভয় দেশই বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তবে পাকিস্তান এই মধ্যস্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেও ভারত এ বিষয়ে নীরব থাকে।

এ ছাড়া, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও মূল সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে।’

এদিকে, পরে পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য রবিবার উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে, উভয় দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা আজ (সোমবার) সরাসরি বৈঠকে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গত কয়েক দিন ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলিতে লিপ্ত ভারত-পাকিস্তান। হামলার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। আবার দুই দেশেরই দাবি, প্রতিপক্ষের হামলা প্রতিরোধেই গুলি চালিয়েছে তারা। এমনকি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন নিয়েও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে চলেছে চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।

কাশ্মির নিয়ে এই ভারত-পাকিস্তানের এই বিরোধ বহু পুরনো। উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ চায়। এরই মধ্যে অঞ্চলটি নিয়ে দুবার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে। এখনও এই অঞ্চল নিয়ে তীব্র সংঘাত চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর