বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২২ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৫০

ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান এই যুদ্ধ থামাতে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।

বিবিসি বলছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ অবসানে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা নতুন একটি যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে এ কথা বলেছেন।

ওই কর্মকর্তার তথ্যমতে, পাঁচ থেকে সাত বছর স্থায়ী হবে, এমন একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রস্তাবে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি এবং গাজা থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। আলোচনার জন্য হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের কায়রো সফরে যাওয়ার কথা।

এই পরিকল্পনায় সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে কায়রোতে পৌঁছেছে।

গাজা উপত্যকায় হামলায় খান ইউনিস, জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া ও গাজা শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কায়রোতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন হামাসের রাজনৈতিক কাউন্সিল প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ ও মুখ্য আলোচক খলিল আল-হাইয়া। এর আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি। যদিও হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে।

২০০৭ সাল থেকে হামাস গাজার শাসনক্ষমতায় থাকলেও ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাস এখন পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা নতুন কোনো প্রশাসন এর নিকট গাজা হস্তান্তরে রাজি। তবে নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যাতে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি।

প্রাণ গেল আরও ২৯ ফিলিস্তিনির

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও স্থল অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনের মতো সোমবারও ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে আরও ২৯ জন ফিলিস্তিনির। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে নির্বিচারে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৯ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ মানুষও।

গাজা শহরের একটি তাঁবু ক্যাম্পে চালানো হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এই হামলা এমন সময় চালানো হয়েছে, যখন তাঁবুগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন দিনের খাবার সংগ্রহ বা বিশ্রামে ছিলেন।

এদিকে গাজার বর্তমান অবস্থা যেন এক বন্দিশিবিরে রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী উপত্যকার প্রধান সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ করে ফেলার পাশাপাশি গাজাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। জানা গেছে, গাজার মোট ভূখণ্ডের ৬৯ শতাংশকেই ‘নো-গো জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে দখলদার ইসরায়েল, যেখানে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ তো দূরের কথা, নড়াচড়াও করতে পারছে না।

এ ছাড়া গাজা ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আরও তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সংঘাতময় এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের পুনরায় গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে, যেন হামাসের ওপর চাপ আরও বাড়ানো যায়।

এদিকে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী রণতরীতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার দাবি ঘিরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুতিদের বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার’ হুমকি দিয়েছেন।

গাজার দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যেও মানবিক সম্পর্কের এক আবেগঘন চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রয়াত খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়েছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। পোপ চলমান যুদ্ধে গাজার মানুষের পাশে থেকে ধারাবাহিকভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সমবেদনা জানিয়ে আসছিলেন।

প্রতিদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খোঁজ নিতেন পোপ ফ্রান্সিস

গাজার সংঘাত নিয়ে একাধিকবার মুখ খুলেছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। একইসঙ্গে গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টানদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার গাজার ল্যাটিন-রাইট চার্চ অব দ্য হোলি ফ্যামিলির যাজক ফাদার গ্যাব্রিয়েল রোমানেলি বিবিসিকে এ কথা জানান। গ্যাব্রিয়েল রোমানেলি জানান, পোপ তাদের নিরাপত্তার খোঁজখবর নিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ফোন করতেন। এমনকি তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় কিছু আরবি বাক্যও শিখেছিলেন তিনি।

রোমানেলি জানান, সর্বশেষ শনিবার পোপের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। পোপ তাদের ফোন করে আশীর্বাদ দিয়েছেন এবং তার জন্য প্রার্থনা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হোলি ফ্যামিলির যাজক আরও বলেন, ‘এখানে জীবনযাপন করা সহজ নয়। এখানকার একজন যাজক হিসেবে পোপের ঘনিষ্ঠতা অনুভব করা আমাদের জন্য ঈশ্বরের বিশেষ দয়ার একটি নিদর্শন ছিল। চার্চে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য এটি আমাদের উৎসাহ জুগিয়েছে।’

পোপ ফ্রান্সিস মারা যাওয়ার আগে তার শেষ বার্তায় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ইস্টার সানডের ওই বার্তা উচ্চ স্বরে পড়েছিলেন তার সহযোগী।

এ বিভাগের আরো খবর