যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভিসা বাতিল হওয়াদের মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থীই ভারতীয়। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের অভিযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেস। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৩২৭টি ভিসা বাতিলের ঘটনার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতীয়। এই পরিসংখ্যানে উদ্বেগ প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ইস্যুটি কি মার্কিন প্রতিরূপের সঙ্গে আলোচনায় তোলা হবে?
এআইএলএর বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (ডিওএস) এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিশানা করছে। এতে করে ভিসা বাতিল, পড়াশোনার স্ট্যাটাস বাতিল এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ৩২৭টি কেস সংগ্রহ করেছে, যার অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এর পরই আছে চীন। দেশটির ১৪ শতাংশ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশ।
রমেশ এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, ভিসা বাতিলের কারণ অস্পষ্ট এবং এলোমেলো। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা ছড়াচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন? এআইএলএর দাবি, বিক্ষোভে জড়িত নয়- এমন শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। অনেকের এসইভিআইএস স্ট্যাটাস বাতিল করা হচ্ছে, যা পড়াশোনা ও থাকার অনুমতির মূল ভিত্তি।
৪০ সেকেন্ডের মধ্যে আবেদন বাতিল!
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য বি১/বি২ ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেছিলেন ভারতের এক নাগরিক। ভারতে তার স্থিতিশীল চাকরি এবং সুস্পষ্ট ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষাৎকারের মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তার আবেদন বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই অভিজ্ঞতা সামাজিকমাধ্যম রেডিটে শেয়ার করেছেন তিনি, যা মার্কিন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সাধারণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ওই ব্যক্তি ফ্লোরিডায় দুই সপ্তাহের ছুটি কাটাতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং ইউনিভার্সাল স্টুডিওর মতো জনপ্রিয় স্থান ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার মাত্র তিনটি প্রশ্নের পরই শেষ হয়ে যায়।
দূতাবাস তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি কেন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চান?’, ‘আপনি কি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করেছেন?’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রে কি আপনার বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের কেউ থাকে?’ এর পরই তাকে ২১৪(বি) ধারার অধীনে ভিসা প্রত্যাখ্যানের নোটিশ দেওয়া হয়।
জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করিনি। তবে ফ্লোরিডায় আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ এই জবাবের পরপরই তার আবেদন বাতিল করা হয়।
রেডিটে একজন ব্যবহারকারী এই পরিস্থিতির সারাংশ তুলে ধরে বলেন, ‘আপনার আবেদন সঠিকভাবেই বাতিল হয়েছে, যদিও এটা দুর্ভাগ্যজনক। আপনার কোনো বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই এবং আপনার প্রেমিকা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক এবং ভারতে ফেরার কোনো শক্তিশালী কারণ না থাকার ইঙ্গিত দেয়।’
মার্কিন ভিসা প্রত্যাখ্যানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিজ দেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক প্রমাণে ব্যর্থতা। এই সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পারে স্থিতিশীল চাকরি, সম্পত্তি বা পারিবারিক দায়বদ্ধতা। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্থিতিশীল চাকরি থাকা সত্ত্বেও বিদেশে ভ্রমণের রেকর্ড না থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রেমিকার উপস্থিতি তার সেখানে অতিরিক্ত সময় থাকার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ভিসা আবেদনকারীদের উচিত তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা। ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভুল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দেওয়া বা ভ্রমণের উদ্দেশ্য পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে এবং আবেদন বাতিল হতে পারে।