বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় নিহত ৬০

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৬ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:০৩

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬২ জন। এর মধ্যে গতকাল রোববার ভোর থেকে চালানো হামলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে ফের হামলা শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু নিহত হচ্ছে।

গাজার ১০ লাখেরও বেশি শিশু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাচ্ছে না বলেও সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। গাজায় আগ্রাসনের সময় চলতি বছরের ২৩ মার্চ ১৫ জন জরুরি চিকিৎসা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাতে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল আইডিএফ।

হত্যার শিকার রেফাত রাদওয়ানের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি প্রকাশের পর বিষয়টি সামনে আসে। ত্রাণবাহী একটি দল নিহত চিকিৎসা কর্মীদের মরদেহগুলো খুঁজে পায়। এ সময় তারা রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করেছিল।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাকর্মী ও ত্রাণকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে, যা নতুন প্রকাশিত একটি ভিডিওতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এটি আন্তর্জাতিক আইনে একটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

গাজায় ১৫ জন চিকিৎসা ও ত্রাণকর্মীর হত্যাকাণ্ডকে ‘নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধাপরাধ’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক সাবেক প্রধান এবং মেডিয়েশন গ্রুপ ইন্টারন্যাশনালের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মার্টিন গ্রিফিথস। ওই ঘটনায় আটজন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ছয়জন দমকল কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হন। রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এ সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশির ভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশির ভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এত বেশি যে, ভূখণ্ডটির জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

রাফাকে গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইসরায়েল

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি নতুন সামরিক করিডোর স্থাপনের কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল। তারা এর নাম দিয়েছে ‘মোরাগ করিডোর’। ২০০৫ সালে উচ্ছেদ করা একটি অবৈধ ইসরায়েলি বসতির নামানুসারে করিডোরটির নামকরণ করা হয়েছে। এই করিডোর রাফাহ শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।

গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, রাফাহ ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনারা যে কাউকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। তিনি ওই এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন।

খোদারি বলেন, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের জন্য একমাত্র খোলা পথ হলো উপকূলীয় রাস্তার আল-রাশিদ করিডোর। এর মানে হলো, আরও বেশি ফিলিস্তিনিকে খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং ইসরায়েল আরও বেশি ভূমি দখলের চেষ্টা করছে।

রাফা শহর কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যকার প্রধান বাণিজ্য পথ ‘কারেম আবু সালেম’ ক্রসিংয়ের প্রধান পথ এই শহরটির ভেতর দিয়েই গেছে। পাশাপাশি এটি রাফাহ সীমান্ত দিয়ে বাইরের জগতের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের অন্যতম প্রধান সংযোগস্থলও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই করিডোর নির্মাণ গাজার ভূখণ্ড ভাগ করে ফেলার একটি পরিকল্পিত কৌশল, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

১৫ স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজায় জরুরি বিভাগের ওই কর্মীদের হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তাদের সৈন্যরা ভুল করে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

রাফার কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক ট্রাকে গুলি চালানো হয়।

ইসরায়েল প্রথমে দাবি করেছিল, হেডলাইট বা কোনো ধরনের আলো ছাড়াই অন্ধকারে ‌‘সন্দেহজনকভাবে’ গাড়ি বহর এগিয়ে আসার কারণে সৈন্যরা গুলি চালিয়েছিল। যানবাহনের চলাচলের আগে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি বা তাদের সম্মতি নেওয়া হয়নি।

কিন্তু নিহত হওয়া প্যারামেডিকদের একজনের মোবাইলের ফুটেজ খুঁজে দেখা গেছে যে, আহতদের সহায়তা দেওয়ার সময় যানবাহনগুলোতে আলো জ্বলছিল। অর্থাৎ ইসরায়েলি বাহিনীর ওই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী জোর দিয়ে বলছে, কমপক্ষে ছয়জন চিকিৎসক হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তারা এটাও স্বীকার করেছে যে, সৈন্যরা যখন গুলি চালায় তখন জরুরি বিভাগের ওই কর্মীরা নিরস্ত্র ছিল।

এ বিভাগের আরো খবর