ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা চলছেই। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (আনরোয়া) জানিয়েছে, তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো সহায়তা প্রবেশ করেনি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে দিয়েছে যে, গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল কমপক্ষে ১৭ হাজার ৪০০ শিশুকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬০০ শিশুকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে চাপা পড়ে আছে, যাদের বেশিরভাগকেই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ লাখই শিশু। গত ১৭ মাস ধরে ইসরায়েলি হামলার কারণে তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের স্কুল ধ্বংস করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ২০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু।
যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। কারণ যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন তারা আর বেঁচে নেই বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজা থেকে তাদের এক-তৃতীয়াংশ কর্মীকে সরিয়ে আনা হবে। কোনোভাবেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে কর্মীদের তারা গাজায় রাখতে চাইছেন না।
গাজায় মজুদ আছে মাত্র ১৪ দিনের খাদ্য!
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে গাজাবাসী। উপত্যকাটিতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। যার ফলে খাদ্য সংকটে রয়েছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। আর মাত্র দুই সপ্তাহের খাদ্য মজুত রয়েছে উপত্যকাটিতে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছে, গাজায় মাত্র দুই সপ্তাহের খাবার অবশিষ্ট রয়েছে, সেখানে লাখ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।
রোমভিত্তিক সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ডব্লিউএফপির গাজায় প্রায় ৫ হাজার ৭০০ টন খাদ্য অবশিষ্ট রয়েছে- যা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যথেষ্ট।
জাতিসংঘ গত বুধবার জানিয়েছে, নতুন করে ইসরাইলি অভিযানের ফলে মাত্র সাত দিনে ১ লাখ ৪২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর ইসরায়েল গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়ার পরে সরবরাহ হ্রাসের বিষয়ে সতর্ক করেছে।
ডব্লিউএফপি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজায় নতুন খাদ্য সরবরাহ আনতে অক্ষম। সংস্থাটি বলছে, গাজার লাখ লাখ মানুষ আবারও তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ উপত্যকায় মানবিক খাদ্য মজুদ কমে যাচ্ছে এবং সাহায্যের জন্য সীমান্ত বন্ধ রয়েছে।
ডব্লিউএফপি আরও বলছে, গাজায় সামরিক তৎপরতার সম্প্রসারণ খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে এবং প্রতিদিন কর্মীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।