ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজার নিয়ন্ত্রক দল হামাসের মধ্যে রোববার গ্রিনিচ মান সময় সাড়ে ৬টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা একটি চুক্তি অনুমোদন করায় গাজায় যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত হয়।
এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি সহজতর করা। একই সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলা মারাত্মক ও সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করা।
সীমিত আকারের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পূর্ণ মন্ত্রিসভার বৈঠক করে সরকার যুদ্ধবিরতির সময় নিশ্চিত করে।
সাধারণত জরুরি অবস্থা দেখা না দিলে সীমিত নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় ইসরায়েলি সরকারের কার্যক্রম স্থগিত রাখ হয়।
মধ্যস্থতাকারী কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় এবং গত বুধবার প্রাথমিকভাবে তা ঘোষণা করা হয়।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে হামাসের জটিলতাকে দায়ী করে এটি চূড়ান্ত করতে আরও দেরি হরেন।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার চুক্তিটি অনুমোদনের সুপারিশ করে এটি এগিয়ে নেয়।
চুক্তির প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে গাজায় আটক তিন ইসরায়েলি নারী ও ৯৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে রোববার মুক্তি দেওয়া হবে।
চ্যানেল১২-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইসরায়েলে বন্ধ থাকা অস্ত্র সরবরাহ শুরু হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যদি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারি, তবে যুদ্ধের জন্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত সরঞ্জাম থাকবে না।’
এদিকে চুক্তি লঙ্ঘন না করতে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্প।
দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন এবং চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি দাবি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী এ সময়ে হামাস প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
চুক্তির পূর্ণ শর্তাবলীর প্রতি তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করার এক দিন পর শুক্রবার হামাস এ কথা জানায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর একটি অভূতপূর্ব আন্তসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলে হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়েছিল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৬ হাজার ৮৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মানুষ বিভিন্ন চাহিদার সহায়তা পেতে সংগ্রাম করছে। বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের তীব্র ঘাটতি রয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জিম্মি হওয়াদের মধ্যে ৯৪ জন এখনও হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধের আগে অপহৃত চার ইসরায়েলি রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।