যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আহত বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বুধবার জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
ফায়ারফাইটাররা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলের আলটাডেনার শহরতলীর ১০ হাজার ৬০০ একর এলাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রায় দেড় হাজার ভবন আগুনে পুড়ে গেছে। প্রায় ১ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের শেরিফ রবার্ট লুনা জানান, এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারোনি জানান, পালিসেডস ও ইটন এলাকায় দুটি দাবানলে সাত হাজারের বেশি এলাকা পুড়ে যায়। পালিসেডসের আগুনে বিপুলসংখ্যক মানুষ আহত হন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড্যানিয়েল সোয়াইন জানান, প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ম্যারোনি জানান, ২৪ ঘণ্টা পার হলেও দাবানল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তো আসেইনি, এর আরও অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে লোকজন বাড়ি, গাড়ি ফেলেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ পরিস্থিতিকে হলিউডের সিনেমার দৃশ্যের সঙ্গে তুলনা করছেন।
আগুন নেভাতে ১ হাজার ৪০০ ফায়ারফাইটার কাজ করছেন। অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
প্যাসিফিক পলিসেডস এলাকায় জেনিফার অ্যানিস্টোন, ব্রাডলি কুপার, টম হ্যাঙ্কস, রিজ উইদারস্পুন, অ্যাডাম স্যান্ডেলার, মাইকেল কিটনসহ অনেক হলিউড তারকার বাড়ি রয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া দাবানলে মঙ্গলবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুই হাজার ৯০০ একরেরও বেশি এলাকা পুড়ে যায়। কর্তৃপক্ষ রাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অসংখ্য বাড়িঘর পুড়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ১৩ হাজার ভবন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সান্তা মনিকা ও মালাবু উপকূলীয় শহরগুলোর মধ্যে প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় কমপক্ষে ২ হাজার ৯২১ একর পুড়ে যায়। এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মার্টিন স্যানসিং জানান, গত ২০ বছরের মধ্যে দাবানলের এমন ভয়াবহতা আর কখনও দেখেননি।
কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। চারপাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে।
ছবিতে আরও দেখা যায়, অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা বিশেষ ব্যবস্থায় সমুদ্র থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। আগুনের শিখা বাড়িঘরকে ক্রমাগত গ্রাস করছে। বুলডোজারগুলো রাস্তা থেকে পরিত্যক্ত যানবাহনগুলোকে সরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিস বিভাগ ছুটিতে থাকা কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
দাবানল ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ১৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।