যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক দেশটির বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য অলঙ্কার স্বরূপ। দেশটির জনগণ ও ভোটার ছাড়াও সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই বিতর্কে প্রার্থীদের বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে যাচাই করে থাকেন। তিন ধাপের বিতর্কের কোন ধাপে কে এগিয়ে গেলেন তা যেমন ভোটারদের প্রভাবিত করে তেমনই এর ওপর নির্ভর করে প্রার্থীর ইমেজ ও প্রচারণার জলুস।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে এবার ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী ৮১ বছর বয়সী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিক্যান দলের প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ৭৮ বছর বয়স্ক ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর সঙ্গত কারণেই চলছে প্রার্থীদের বক্তব্য ও বিতর্কের বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা হিসাব এবং নানা গণমাধ্যমের জরিপ।
এই জরিপে ট্রাম্পের কাছে বাইডেনের রীতিমতো নাস্তানাবুদ হওয়ার কথাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোর প্রধান শিরোনাম। অবস্থা এমন যে বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে থাকা উচিত কি না তা নিয়েই শুরু হয়েছে মহাবিতর্ক।
এ অবস্থায় বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ।
যুক্তরাষ্ট্রে এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ উপলক্ষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টায়) প্রথমবারের মতো বিতর্কে অংশ নেন তারা। বিতর্কের আয়োজন করে সিএনএন ও এবিসি। সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিএনএনের জরিপ অনুযায়ী এই বিতর্কে হেরে গেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস শুক্রবার এক সম্পাদকীয়তে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর এবং নভেম্বরে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য অন্য ডেমোক্র্যাটকে মনোনয়ন দেয়ার ওই আহ্বান জানায়। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, এএফপি
বাইডেনকে ‘একজন মহান সরকারি কর্মচারীর ছায়া’ হিসেবে বর্ণনা করে সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় পরিষদ বলেছে, ‘প্রেসিডেন্ট এবং ট্রাম্পের মধ্যে বৃহস্পতিবারের বিতর্ক প্রমাণ করেছে যে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন তার নিজের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কী করবেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি। হিমশিম খেয়েছেন ট্রাম্পের উসকানির জবাব দিতে। হিমশিম খেয়েছেন ট্রাম্পকে তার মিথ্যা কথা, ব্যর্থতা ও ভয়ানক সব পরিকল্পনার জন্য জবাবদিহি করাতে। একাধিকবার তিনি একটা বাক্য শেষ করতে গিয়ে সংগ্রাম করেছেন।’
বাইডেন এখন যা করতে পারেন তা হলো- তিনি পুনরায় নির্বাচন করছেন না- এই ঘোষণা দেয়া। দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট এক বেপরোয়া জুয়ায় লিপ্ত আছেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতে ডেমোক্র্যাট নেতাদের মধ্যে স্পষ্টবাদী, বাধ্যকারী ও উদ্যমী ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার মতো অধিকতর যোগ্য বিকল্প রয়েছেন।
ট্রাম্প ও বাইডেনের ঘাটতিগুলোর মধ্যে এর যেকোনোটি বেছে নিতে ভোটারদের বাধ্য করার মধ্য দিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি গ্রহণ করার কোনো কারণ দলের নেই। আমেরিকানরা যা নিজেদের চোখে দেখেছেন, বাইডেনের সেই বয়স ও দুর্বলতা তারা এড়িয়ে যাবেন বা হিসাবে নেবেন না- সরলভাবে এটা আশা করা হবে এক বড় জুয়া’, বলেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।