প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মক্কার মরুভূমিতে একটি বিশাল তাঁবু শিবিরে (মিনা) জমায়েত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র হজ কার্যক্রম শুরু করেছেন হাজিরা। শুক্রবার ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফ তাওয়াফের পর মিনায় জড়ো হন তারা।
সারা বিশ্বের ১৫ লাখের বেশি হজযাত্রী এরই মধ্যে মক্কা ও এর আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়েছেন। এছাড়া সৌদি আরবের হাজিরা যোগ দেয়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সৌদি কর্তৃপক্ষের ধারণা, চলতি বছর এ সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
এমন সময়ে এবারের হজ শুরু হলো, যখন ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা বিধ্বস্ত। স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে উপত্যকায়। যুদ্ধটি মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুদ্ধে হামাসকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান। অন্যদিকে, ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ তাদের অন্যান্য মিত্ররা।
ইসরায়েলি বাহিনী মিসরের সীমান্তে রাফা শহরে হামলা ও রাফা ক্রসিং বন্ধ করে রাখায় এ বছর হজে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি উপত্যকার ফিলিস্তিনি মুসলিমদের।
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ৪ হাজার ২০০ হজযাত্রী মক্কায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে গাজা যুদ্ধে নিহত ও আহত ফিলিস্তিনিদের পরিবারের আরও এক হাজার সদস্যও হজ পালনের জন্য মক্কায় এসেছেন বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে সরাসরি গাজা থেকে নয়, রাফাহ ক্রসিং বন্ধ হওয়ার আগে ওই আমন্ত্রিতরা গাজার বাইরে (বেশিরভাগই মিসরে) ছিলেন।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসের ৭৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নারী আমনা আবু মুতলাক এপিকে বলেন, ‘ক্রসিং বন্ধ থাকায় এবং ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে আমরা হজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তারা (ইসরায়েল) আমাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছে।’
মোহাম্মদ রফিক নামে এক ভারতীয় হাজি মিনার তাঁবু ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার সময় বলেন, ‘আমরা মুসলমানদের জন্য, আমাদের দেশ ও জনগণের জন্য, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য প্রার্থনা করি।’
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম হলে প্রত্যেক মুসলমানকে তাদের জীবনে অন্তত একবার হলেও পাঁচ দিনের এই তীর্থযাত্রায় সামিল হতে হবে।
এটি হাজিদের জন্য একটি চলমান আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। তাদের বিশ্বাস, হজের মাধ্যমে পাপমোচন হয় এবং সারা বিশ্বের মুসলমান একত্রিত হয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী হয়।
হজ উপলেক্ষে মক্কা ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এ বছর যাদের হজে অংশগ্রহণের অনুমতি নেই, তাদের প্রবেশ ঠেকাতে শহরের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলোতে তল্লাশি করা হচ্ছে।
শুক্রবার হাজিরা মিনার উদ্দেশে রওনা হন এবং পরে হজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর শনিবার তারা মরুভূমির পাহাড় আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। সেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.) তার শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন, যেটি ‘বিদায় খুতবা’ নামে পরিচিত। সুস্থ হজযাত্রীরা পায়ে হেঁটে এবং অন্যরা বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন।
অনেক হাজি সূর্যের তীব্র তাপ থেকে কিছুটা নিস্তার পেতে ছাতা বহন করছেন। মিনায় দাতব্য সংস্থাগুলো ঠান্ডা পানি বিতরণ করছে এবং হাজিদের শীতল রাখতে পানি ছিটাচ্ছে। মুসল্লিরা এদিন তাদের তাঁবু টাঙিয়ে ছোট্ট বিছানা পেতে বিশ্রাম নেন এবং পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একসঙ্গে প্রার্থনা করেন।
শনিবার আরাফাতের ময়দানে হজ কার্যক্রম শেষে হাজিরা কয়েক কিলোমিটার ভ্রমণ করে মুজদালিফা নামের একটি স্থান থেকে নুড়ি সংগ্রহ করবেন। এরপর তিন দিনের জন্য মিনায় ফিরে এসে সেখানে তারা শয়তানের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতীকী স্তম্ভের দিকে তা নিক্ষেপ করবেন।
পরবর্তীতে তারা কাবা শরিফ চূড়ান্ত প্রদক্ষিণ করার জন্য মক্কায় ফিরে আসবেন যা ‘বিদায় তাওয়াফ’ নামে পরিচিত।
করোনা মহামারির কারণে তিন বছরের কঠোর বিধিনিষেধের পর সম্প্রতি হজ কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। ২০২৩ সালে ১৮ লাখের বেশি হাজি হজ পালন করেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখের বেশি।