যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর হিউস্টন এলাকায় শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে গোটা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়টির আঘাতে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হিউস্টনের মেয়র জন হুইটমায়ার। হারিকেন আইকের যেভাবে কৃষি ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছিল তার সঙ্গে এই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তুলনা করেন তিনি।
২০০৮ সালে হিউস্টনের কাছে আঘাত হানা ক্যাটাগরি-২ মাত্রার হারিকেনের উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে মেয়র বলেন, ‘ঝড়টি ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে বয়ে গেছে। এটি শহরের কেন্দ্রে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।’
হিউস্টনের দমকল বাহিনীর প্রধান স্যামুয়েল পেনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দু’জন উপড়ে পড়া গাছের আঘাতে মারা যান। বাতাসে উল্টে যাওয়া ক্রেনের আঘাতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।’
ঝড়ে গোটা এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ও বিদ্যুতের লাইন উপড়ে পড়েছে। হিউস্টন শহরের কেন্দ্রের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি অফিস ভবনের জানালা ভেঙে গেছে।
হিউস্টন এলাকার কয়েক শ’ স্কুল শুক্রবারের সব ক্লাস বাতিল করেছে। টেক্সাসের বৃহত্তম হিউস্টন ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল ডিস্ট্রিক্ট (এইচআইএসডি) শুক্রবার তাদের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে।
মেয়র হুইটমায়ার বলেন, ‘হিউস্টনের রাস্তায় রাস্তায় গাছ পড়ে আছে। শহরের সব রাস্তায় কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। সড়কের বাতি জ্বলছে না।’
বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, শহরে নিয়োজিত কর্মীরা জরুরি সেবার জন্য ব্যাকলগ ৯১১-এর মাধ্যমে কাজ করছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো গ্যাস লিক বা তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হিউস্টনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটি ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে।
হিউস্টনের ন্যাশনাল আবহাওয়া সেবা বিভাগ এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্ক করে বলে, ‘এই ঝড়ের কবলে কেউ থাকলে এখনই আশ্রয় নিন। নিচতলায় অবস্থান নিন।’
সন্ধ্যায় হিউস্টন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে আকস্মিক বন্যা এবং তীব্র বজ্রপাতের বিষয়েও সতর্কতা জারি করা হয়।
ইউটিলিটি ট্র্যাকার পাওয়ারআউটেজ.ইউএস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টেক্সাসের প্রায় ৯ লাখ ২৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিলেন। এর মধ্যে হিউস্টনের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত হ্যারিস কাউন্টি ও এর আশপাশে আট লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
বিদ্যুৎ কোম্পানি সেন্টারপয়েন্ট এনার্জির মুখপাত্র লোগান অ্যান্ডারসন বলেন, ‘হিউস্টন এলাকায় বর্তমানে ব্যাপক লোডশেডিং চলছে, ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সিস্টেমের ক্ষতির পরিমাণ জানতে পারব না।’
হিউস্টনের মেয়র বলেন, ‘আমি সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে বলছি, প্রতিবেশীদের দিকে নজর রাখতে বলছি। এই বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হবে।’
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে কয়েক দফা বজ্রপাতের কারণে হিউস্টন এলাকাসহ টেক্সাসের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল বন্ধ করে দেয়াসহ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।