এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির ছেলের বিয়ে বলে কথা। বিয়ের প্রধান অনুষ্ঠান শুরুর চার মাস আগেই বরের বাবা মুকেশ আম্বানি প্রাক-বিবাহ আনন্দ উদযাপনে রেকর্ড গড়া রাজসিক সব আয়োজন করে চলেছেন। রাজসিক অভিধায়ও এসব আয়োজনের ব্যাপকতা ও ঔজ্জ্বল্য ধারণ করা কঠিন।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় ছোট শহর জামনগরে শুক্রবার রাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, হলিউড ও বলিউডের তারকাদের মেলা বসে। বিলিয়নিয়ার শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বিশাল এক আয়োজন উপলক্ষে জড়ো হন তারা।
এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি অতিথিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই আয়োজনে। তাদের মধ্যে রয়েছেন পপতারকা রিয়ান্না, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, সুন্দর পিচাই, ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং বলিউড তারকা শাহরুখ খানও।
সবার চোখ এখন ২৮ বছর বয়সী অনন্ত আম্বানি ও তার দীর্ঘ সময়ের বান্ধবী রাধিকা মার্চেন্টের ওপর। আগামী জুলাইয়ে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন তারা। এনকোর হেলথকেয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী বীরেন মার্চেন্ট ও উদ্যোক্তা শায়লা মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা।
এই উৎসব আম্বানি পরিবারের জমকালো ও আভিজাত্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এই ভারতীয় বিলিয়নিয়ারের যে প্রভাব সেটিও প্রদর্শন করে।
আয়োজনে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াটাই যেন আম্বানির বিশেষত্ব। ২০১৮ সালে মেয়ের বিয়ের সময় পশ্চিম ভারতের শহর উদয়পুরে বিবাহ-পূর্ব জমকালো উৎসবে পপ সেনসেশন বিয়ন্সেকে নিয়ে এসে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন আম্বানি। সে সময় ভারতীয় সেলিব্রিটি ও বলিউড তারকাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও জন কেরি।
সে বছরই ইশা আম্বানি ও আনন্দ পিরামল ইতালির লেক কোমোতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাগদান সম্পন্ন করেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মুম্বাইতে আম্বানির বাসভবনে বিয়ে করেন তারা।
বিয়ে-পূর্ব আয়োজনে বিশেষ যা রয়েছে
আগামী জুলাইতে বিয়ের সময় কেমন জমকালো আয়োজন হতে চলেছে তারই আভাস দিচ্ছে তিন দিনব্যাপী এই প্রাক-বিয়ে আয়োজন।
গুজরাটের কাছেই মরুভূমিতে অবস্থিত ৬ লাখ জনসংখ্যার শহর জামনগরে আম্বানিরা এই উৎসবের আসর বসিয়েছে। যেখানে তাদের পারিবারিক নিবাস এবং তাদের ব্যবসার প্রধান তেল শোধনাগারও রয়েছে।
সেখানে জঙ্গল থিমের পোশাক পরে হবু বর অনন্ত পরিচালিত একটি প্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন অতিথিরা। নির্যাতিত, আহত ও বিপন্ন প্রাণীদের বিশেষ করে হাতিদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার একর জমির ওপর এই কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে, যা ‘ভানতারা’ বা ‘বনের তারকা’ নামে পরিচিত।
আমন্ত্রণপত্র সূত্রে জানা যায়, অতিথিদের জন্য প্রতিদিন ভিন্ন ও নতুন এক ড্রেস কোড থাকবে। এজন্য তাদের সাহায্য করতে হোটেলে মুড বোর্ড, হেয়ার স্টাইলিস্ট, মেকআপ আর্টিস্ট ও পোশাক ডিজাইনাররা থাকবেন।
একটি মন্দির প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানও হবে।
অতিথিদের অনেকেই চার্টার্ড প্লেনে আসবেন। এই আয়োজনে প্রায় ১০০ শেফের তৈরি ৫০০ ধরনের খাবার পরিবেশন করা হবে।
অতিথিদের তালিকায় আরও রয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন জসিম আল থানি; কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার; ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক এবং রানী জেটসুন পেমা।
বুধবার আশপাশের গ্রামে বসবাসকারী ৫১ হাজার লোকের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে আম্বানি পরিবার।
কে এই মুকেশ আম্বানি?
১১৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক ৬৬ বছর বয়সী মুকেশ আম্বানি ফোর্বস-এর তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের দশম এবং এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
তার মালিকানাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার বার্ষিক আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পেট্রোকেমিক্যাল, তেল-গ্যাস থেকে শুরু করে টেলিকমসহ রিটেইল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।
১৯৬৬ সালে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত রিলায়েন্স আম্বানির নেতৃত্বে ২০১৬ সালে ৪জি ফোন ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা জিও চালু করার সঙ্গে সঙ্গে টেলিকম মূল্য যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল। বর্তমানে এটি ফাইভ জি পরিষেবা দিচ্ছে এবং গ্রাহক সংখ্যা ৪২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।
ভারতে নিজেদের ব্যবসা আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে একীভূত করতে ডিজনি এ সপ্তাহের শুরুতে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে। আর এর মাধ্যমে নতুন একটি মিডিয়া জায়ান্টের জন্ম হতে চলেছে।
আম্বানি পরিবারের অন্যান্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুম্বাইতে ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অ্যান্টিলা নামে একটি ২৭ তলাবিশিষ্ট ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। এটিতে তিনটি হেলিপ্যাড, একসঙ্গে ১৬০টি গাড়ির ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যারেজ, ব্যক্তিগত সিনেমা থিয়েটার, সুইমিং পুল ও ফিটনেস সেন্টার রয়েছে।
মুকেশ আম্বানি বর্তমানে দুই ছেলে ও মেয়েকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে শুরু করেছেন। বড় ছেলে আকাশ আম্বানি রিলায়েন্স জিওর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর মেয়ে ইশা রিটেইল সেক্টর এবং সর্বকনিষ্ঠ অনন্ত নতুন জ্বালানি শক্তির ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, সত্তর-আশির দশকে কংগ্রেস সরকার এবং ২০১৪ সালের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে রাজনৈতিক সম্পর্কের জোরে আম্বানির প্রতিষ্ঠান বিকাশ লাভ করে। ভারতে এই ব্যবসায়ী নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্ক আম্বানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নতি লাভ করতে সাহায্য করেছে।