কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মরদেহ ফিরে দেশটির প্রেসিডন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তার মা।
যে কারাগারে পুতের ‘কট্টরতম সমালোচক’ হিসেবে পরিচিত নাভালনির মৃত্যু হয়েছে সেই কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে এক ভিডিওতে তিনি এই দাবি জানান বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি ৪৭ বয়সী নাভালনির মৃত্যুর খবর দেয় কারাগার কর্তৃপক্ষ, তবে এখনও মরদেহ দেখার সুযোগ পায়নি তার পরিবার। মরদেহ কোথায় আছে জানানো হয়নি সে তথ্যও।
বিবিসি বলছে, নাভালনির মাকে বলা হয়েছে, মরদেহ ‘রাসায়নিক বিশ্লেষণের’ জন্য রাখা হয়েছে। দু সপ্তাহ এভাবেই তা থাকবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে। আর তার স্ত্রীর দাবি, মরদেহ লুকিয়ে রেখেছে কারাগার কর্তৃপক্ষ।
সোমবার একটি ভিডিওতে ‘মুক্ত রাশিয়া’ এর জন্য লড়াই করতে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইউলিয়া নাভালনায়া সরাসরি পুতিনকে তার স্বামীকে হত্যা করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নার্ভ এজেন্ট নভিচক দিয়ে যে বিষক্রিয়া ঘটানো হয়েছে নাভালনির শরীরে সেই চিহ্ন অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত তার মরদেহ রাখা হবে কর্তৃপক্ষের কাছে।
মঙ্গলবার নাভালনির মা ভিডিওতে বলেন, ‘আমি তাকে পাঁচ দিন ধরে দেখতে পাচ্ছি না, তারা তার দেহ আমাকে দিতে অস্বীকার করছে এবং তারা বলছে না সে কোথায় আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, ভ্লাদিমির পুতিন- সব আপনার একার ওপর নির্ভর করছে। আমাকে আমার ছেলেকে দেখতে দিন। তার মরদেহ অবিলম্বে ছেড়ে দেয়া হোক।’
প্রতিবেদন বলছে, নাভালনিকে গতবছরের শেষ দিকে রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইয়ামালো-নেনেতের আর্কটিক পেনাল কলোনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই কারাগারেই ছিলেন তিনি।
কারাকর্তৃপক্ষ বলেছে, হাঁটার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর আর তার চেতনা ফেরেনি।
নাভালনির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার মা এবং আইনজীবী প্রত্যন্ত ওই কলোনিতে যান। তবে মরদেহ শনাক্ত করার চেষ্টা বারবার ঠেকিয়ে দেয় কারাগারের মর্গ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
ক্রেমলিন বলেছে, নাভালনির মৃত্যুর তদন্ত চলছে এবং এখনও পর্যন্ত কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।
নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ বলেন, তদন্তকারীরা নাভালনির মা লিউডমিলাকে বলেছেন, তারা রাসায়নিক বিশ্লেষণ করার সময় নিয়েছেন, তারা দুই সপ্তাহের জন্য মরদেহ হস্তান্তর করবেন না।
পশ্চিমা নেতারা নাভালনির মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, বিষয়টির সত্যতা হলো; পুতিন দায়ী। তিনি আদেশ দিয়েছিলেন কি না বা তিনি সেই ব্যক্তিকে যে পরিস্থিতিতে রেখেছেন তার জন্য তিনি দায়ী।
নাভালনির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অন্যান্য অভিযোগে হওয়া মামলয় গত বছরের আগস্টে তাকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় রাশিয়ার আদালত। তিনি বন্দি ছিলেন ২০২১ সাল থেকে।
নাভালনি ও তার সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুয়া বলে দাবি করে আসছেন। তার রাজনৈতিক আন্দোলনকে চরমপন্থি হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রধান বিরোধী দল রাশিয়া অফ দ্য ফিউচারের নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে ২০২০ সালের আগস্টে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে।
নির্বাচনি প্রচার শেষে অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইটে সাইবেরিয়ার টমস্ক থেকে মস্কো ফিরছিলেন নাভালনি। মাঝ আকাশে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ওমস্ক শহরে বিমানের জরুরি অবতরণ করিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। কোমায় চলে যাওয়া নাভালনিকে রাখা হয় আইসিইউতে।
তবে সেখানে সঠিক চিকিৎসা পাবেন না এমন আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে জার্মানিতে চিকিৎসা নেন নাভালনি। কয়েকটি মামলা থাকায় ক্রেমলিনের অনুমতি নিয়ে বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি।
জার্মান চিকিৎসকেরা জানান, নাভালনির ওপরে নভিচক নামে স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পুতিন সরকার জড়িত বলে দাবি করে আসছে নাভালনির দল ও পরিবার।