ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০৭টি মরদেহ আনা হয়েছে হাসপাতালে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এমন তথ্য জানিয়ে বলেছে, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সহিংসতার আরেকটি ভয়াবহ মাইলফলক।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ‘পুরোপুরি বিজয়’ অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ অব্যাহত থাকবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সৈন্যরা শিগগিরই মিশরীয় সীমান্তের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় চলে যাবে। সেখানে গাজার অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২৩ লাখ লোক এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ১০৭টি মরদেহ। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৯২ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক ও কতজন সৈনিক তার হিসাব দিতে পারেনি। তবে নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। এ যুদ্ধে ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গাজায় হামাস পরিচালিত সরকারের অংশ হলেও হতাহতের বিস্তারিত রেকর্ড রাখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর হিসাব গাজায় আগের যুদ্ধগুলোর পরিসংখ্যান জাতিসংঘের সংস্থা, স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও ইসরায়েলের নিজস্ব পরিসংখ্যানের সঙ্গে অনেকাংশে মিলে গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এ সময় প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
ইসরায়েলের হাতে বন্দি ২৪০ ফিলিস্তিনির বিনিময়ে নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে শতাধিক বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়। হামাসের কাছে এখনও প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের এক-চতুর্থাংশ ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০০৭ সাল থেকে হামাস শাসিত অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল বলছে, তারা কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি জঙ্গিকে হত্যা করেছে। সামরিক বাহিনী বলছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করে। এত বেশি মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করে তারা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, অক্টোবরের শেষ দিকে স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের ২৩৬ সেনা নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের মতে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের হামলার মুখে গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর তিন সদস্যবিশিষ্ট যুদ্ধ-মন্ত্রিসভার সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বেনি গান্টজ রোববার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই জিম্মিদের মুক্তি না দেয়া হলে এই আক্রমণ রাফা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাসের পবিত্র মাসটি প্রায়ই এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি সময়।
ইসরায়েল বলেছে, তারা রাফাহ থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে বিধ্বস্ত অঞ্চলের কোথায় তারা যাবে তা পরিষ্কার নয়।
ওদিকে মিসর সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে ফিলিস্তিনিদের যেকোনো গণঅনুপ্রবেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরনো শান্তিচুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ইসরায়েলের শীর্ষ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এখনও আরেকটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করতে মিসর ও কাতারের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেই প্রচেষ্টা থমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে হামাস বলছে, ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ না করা পর্যন্ত এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেবে না। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্যসহ শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তিরও দাবি জানিয়েছে তারা।