বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাঙনে যমুনায় মিশছে শাহজাদপুরের একের পর এক গ্রাম

  •    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৬:০৬

আরকান্দি গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, ‘ভাঙন রোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর আগে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে, কিন্তু ঠিকাদারের লোকজনের ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকায় গত ৩ বছরে কিছুসংখ্যক সিসি ব্লক তৈরি ছাড়া কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে বছর বছর ভাঙনের তাণ্ডবে এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।’ 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি, জালালপুর ও কৈজুরি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাট পাচিল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙন।

গত দুই মাসে এ ভাঙনে এ তিন ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর ও ৩০০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামগুলো হলো ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাড়ামোহনপুর, জালালপুর, পাকুরতলা, সৈয়দপুর ও হাটপাচিল।

যমুনার ভাঙনে এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে সাতটি গ্রাম। এগুলো হলো ঘাটাবাড়ি, বাঐখোলা, দাদপুর, কুচিয়ামারা, সোন্তষা, কোচগাঁও ও ভেকা গ্রাম।

এ বিষয়ে জালালপুর গ্রামের আবদুল মজিদ জানান, ভাঙনের শিকার গ্রামের মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে। অনেকের দিন কাটছে ভাঙন এলাকার খোলা আকাশের নিচে। অনেকে আবার অন্যত্র চলে গেছেন জীবিকার তাগিদে।

হাটপাচিল গ্রামের নুরনবী আক্তার জানান, চোখের সামনে বাড়িঘর যমুনার পেটে চলে গেছে। চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এলাকার প্রভাবশালীরা গত বর্ষা মৌসুমে অপরিকল্পিতভাবে যমুনা নদী থেকে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলন করেন। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উজান থেকে উত্তোলন করা বালুবাহী দুই শতাধিক বাল্কহেড উচ্চগতিতে যমুনা নদীর এ স্থান দিয়ে ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে। এতে তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের তলদেশে বালুর স্তর সরে গিয়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এসব বাল্কহেড চলতে নিষেধ করলে প্রভাবশালীরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। ফলে আমরা প্রাণভয়ে তাদের বাধা দিতে সাহস পাই না।

‘এর ফলে চোখের সামনে আমাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে গেলেও আমাদের চেয়ে দেখে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

আরকান্দি গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, ‘ভাঙন রোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর আগে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে, কিন্তু ঠিকাদারের লোকজনের ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকায় গত তিন বছরে কিছুসংখ্যক সিসি ব্লক তৈরি ছাড়া কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে বছর বছর ভাঙনের তাণ্ডবে এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।’

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, ‘আমি এনায়েতপুর বেড়িবাঁধ থেকে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকা নিয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছি ও ভাঙনে নিঃস্ব অসহায় মানুষের মুখ থেকে তাদের কষ্টের কথা শুনেছি।’

তিনি বলেন, ‘তাদের এই কষ্ট লাঘবে আমি ইতোমধ্যেই পানিসম্পদমন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সিসি ব্লক স্থাপন করে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করবে।

‘বাকি অংশের ভাঙন রোধে এ বছর ১০ হাজার জিওটেক্স টিউব ব্যাগ ফেলা হবে। পরবর্তী বছরে ওই অংশেও সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া হাট পাচিল থেকে ঠুটিয়া স্কুল পর্যন্ত জিমরম প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার করা হবে। এ কাজ শেষ হলে এখনে আর ভাঙন থাকবে না।’

এমপি আরও বলেন, ‘আর যাতে আমার এলাকার এক ছটাক মাটিও না ভাঙে, আমি সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। ইনশাল্লাহ আগামীতে আর শাহজাদপুরে কোনো ভাঙন থাকবে না। আমি সেভাবেই এগোচ্ছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর ভাঙন রোধে সরকারের প্রকল্পের কাজ চলছে, তবে কিছু কিছু ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ না করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ করা হয়েছে।

‘সিংহভাগ কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর