বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাখাইনে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর তুমুল লড়াই

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:১৯

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, আট দিন ধরে বোমা হামলা, সাধারণ মানুষের বাড়িতে আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন নৃসংসতা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। তাদের এসব হামলায় ১৬ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জান্তার হামলায় অসংখ্য বাড়ি ও স্কুল ভবন ধ্বংস হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে ক্ষমতাসীন জান্তার সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জীবনের নিরপত্তায় রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ। মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে দুপক্ষে গোলাগুলির ফলে এপারে বাংলাদেশ সীমান্তে এক পরিবারের বসতঘরে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ঘরে গুলি পড়ার এ ঘটনা ঘটে।

নুরুল ইসলামের শাশুড়ি সামজিদা বেগম বলেন, ‘শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের মিয়ানমারের ওপারের মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ এপারে ভেসে আসতেছে। আমরা ভয়ে ও আতঙ্কে নিরাপদে সরে গেছি।

‘হঠাৎ দেখি ভারী একটা গুলির শব্দ হলো। তখন দেখি আমার মেয়ের জামাইয়ের বসতঘরে টিনের দরজা ছিদ্র হয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে একটি গুলি। তখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে পড়ে গেছি। খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা এসে বসতঘরের উঠান থেকে গুলিটি নিয়ে যান।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. সোলেমান বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দে বাড়িঘরে থাকতে পারছি না। নুরুল ইসলামের বসতঘরে একটি গুলি এসে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও গুলির শব্দে আমরা অনিরাপদ মনে করছি। সন্তান নিয়ে রাতে ও দিনে সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আরাকানের সংঘর্ষ রাজ্যটির বুচিডং পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বুচিডং বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মিয়ানমার সামরিক জান্তার হামলায় গত আট দিনে মিয়ানমারে অন্তত ১৬ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে ১৫ জানুয়ারি রাখাইন রাজ্যের পালেতওয়া শহরটি দখলে নেয়ার দাবি করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

গোষ্ঠীটির মুখপাত্র খাইন থু খা বলেন, ‘আমরা কালাদান নদীর তীরবর্তী বন্দরনগর পালেতওয়া দখলে নিয়েছি।’

প্রতিবেশী দেশগুলোর (বাংলাদেশ ও ভারত) সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য শহরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এরপর থেকেই মূলত সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু হয়। আরাকান আর্মি এখন পুরো রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছে।

সেখানকার সংবাদমাধ্যম দ্য আরকান এক্সপ্রেস নিউজ জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই আরাকানে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। বৃহস্পতিবার বুচিডংয়ের একটি রোহিঙ্গা গ্রামে ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। এতে তিনজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাদের নিহত হওয়ার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

শুক্রবারও বুচিডংয়ের দুটি বাড়ি বোমার আঘাতে ঝলসে গেছে। তবে কোন পক্ষ এ বোমা ফেলেছে, তা এখনও জানা যায়নি। হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন। এতে বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভেতরে ঢোকার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত আট দিন ধরে বোমা হামলা, সাধারণ মানুষের বাড়িতে আগুন দেয়াসহ বিভিন্ন নৃসংসতা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। তাদের এসব হামলায় ১৬ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জান্তার হামলায় অসংখ্য বাড়ি ও স্কুল ভবন ধ্বংস হয়েছে।

ইরাবতি বলছে, শান, রাখাইন, মোন, বাগো, মাগওয়ে এবং সাগাইংয়েতে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে শান রাজ্যে গত সোমবার যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ছোড়া হয়। এতে বাস্তুচ্যুত এক বেসামরিকের মৃত্যু হয়। আশপাশের রাজ্যে বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে অনেক মানুষ এ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে চার বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও আরাকান আর্মি (এএ) এ তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারের সবচেয়ে পুরোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) জানিয়েছে, বাগো রাজ্যের কায়োক্কি এবং ফু গ্রামে জান্তার হামলায় তিন বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি মোন রাজ্যের দুটি গ্রামে গোলা ছোড়ে সামরিক জান্তা। এতে চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হন। মাগওয়ে রাজ্যে গত রোববার রাতে সামরিক বাহিনী চালানো হামলায় বাবা ও ছেলে নিহত হন। এ ছাড়া হামলায় ওই পরিবারের মা ও মেয়ে গুরুতর আহত হন।

এ বিভাগের আরো খবর