বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইরানে জোড়া বোমা হামলায় আইএস-এর দায় স্বীকার

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ২০:২৮

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার এক প্রতিবেদনে আইএস-এর দায় স্বীকার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানানো হয়, ১৯৭৯ সালের পর ইরানে এটিই জঙ্গী গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বড় হামলা। দুই সহোদর আত্মঘাতী বোমা হামলাটি ঘটিয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। আইএস-এর এ দাবির বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি ইরান।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় জোড়া বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কেরমানে বুধবারের এ ঘটনায় অন্তত ১০৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন আরও অন্তত ১৪১ জন। সোলাইমানির সমাধিস্থলের কাছে ওই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার এক প্রতিবেদনে আইএস-এর দায় স্বীকার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানানো হয়, ১৯৭৯ সালের পর ইরানে এটিই জঙ্গী গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বড় হামলা।

বিস্ফোরণের পরদিন বৃহস্পতিবার আইএস-এর মিডিয়া উইং আল-ফুরকান এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, জেনারেল সোলাইমানির চতুর্থ শাহাদাৎবার্ষিকী উপলেক্ষে কেরমানে তার সমাধিস্থলের পাশে শিয়া জনতা জড়ো হওয়ার সময় দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ওই বিস্ফোরণ ঘটায়।

হামলাকারী দুজন সহোদর ছিল বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

শিয়াদের ‘মুশরিক’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তাদের যেখানে যাও, হত্যা করো’ শিরোনামের এক অভিযানের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।

ইসলামের শিয়া শাখাকে ‘ধর্মদ্রোহী’ বলে মনে করে আইএস। এর আগেও ইরানের উপাসনালয় ও ধর্মীয় স্থানগুলো তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

জঙ্গী গোষ্ঠীটি বিবৃতিতে হামলার বিষয়ে আর কোনো সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করেনি। এমনকি তাদের হামলার বিবরণের সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেয়া বিবরণও মেলে না। হামলায় আইএস ৮৪ জন নিহত ও ২৮৪ জন আহত হওয়ার কথা বলেছে, সেটিও ইরানি কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে আলাদা।

আইএস-এর এ দাবির বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি ইরান। তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইরনা ও ইংরেজি গণমাধ্যম প্রেস টিভির প্রতিবেদনে আইএস-এর দায় স্বীকারের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। উভয় সংবাদমাধ্যমই গোষ্ঠীটিকে আরবি নাম ‘দায়েশ’ দ্বারা উল্লেখ করে তাদের দাবির একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেছে।

বুধবার হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কেরমানের জরুরি পরিষেবা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ সাবেরি ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই ৭৩ জন নিহত হন। আর গুরুতর আহতদের অধিকাংশই হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন আরও ১৪১ জন। তাদের মধ্যেও কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।’

হামলার বিবরণ

ইরনা জানায়, প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয় সোলাইমানির সমাধিস্থলের ৭০০ মিটার দূরে। একটি পুজো কারের ভেতর স্যুটকেসের মধ্যে রাখা ছিল বোমাটি। রিমোট কন্ট্রোলারের সাহায্যে সেটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ চ্যানেল আইআরআইবি-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৩টার দিকে। বিস্ফোরণে আহতদের উদ্ধার করতে যখন সভায় উপস্থিতরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান, তখনই (প্রথম বিস্ফোরণের ২০ মিনিট পর) দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়। এটির প্রভাব ছিল ধ্বংসাত্মক।’

বোমা বিস্ফোরণে হতাহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে ইরান।

হুঁশিয়ারি

ঘটনার পর ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি-ইজেই বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘এই নৃশংস ঘটনার হোতা ও বাস্তবায়নকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

সব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের ধরে আইনের হাতে তুলে দিতে ইরানের গোয়েন্দা বিভাগ, নিরাপত্তা বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।

আইআরজিসির বক্তব্য

‘বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়ে শত্রুরা ইরানের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করছে’ উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক করেন ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইআরজিসি কমান্ডার আহমেদ ওয়াহিদি।

ঘটনার পর তিনি বলেন, ‘শত্রুদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না।’

‘হামলা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে’ দাবি করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনা ও যাচাই করার পরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।’

আইএস-এর বিবৃতির আগে বিশ্লেষকরা ও যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা এ ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অনুমান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মনে হচ্ছে এটি সন্ত্রাসী হামলা। একই ধরনের হামলা আমরা এর আগে আইএস-কে করতে দেখেছি। এই মুহূর্তে এটিই আমাদের একমাত্র অনুমান।’ এর একদিন পর দায় স্বীকার করল আইএস।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর সোলাইমানিকে দেশটির সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হিসেবে দেখা হতো।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন জেনারেল সোলাইমানি। তার নেতৃত্বে দেশের বাইরে বিশেষ করে ইরাক, লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালিত হতো।

সোলাইমানিকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় সে সময় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে ইরানের শীর্ষ এই জেনারেলকে ‘বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। অপরদিকে ইরানের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর