ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৭০ জন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কেরমান শহরে সোলাইমানির সমাধিস্থলের কাছে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বলে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় আইআরআইবির বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।
কেরমান প্রদেশের এক স্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমটি এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেছে।
জোড়া বোমা হামলার এই ঘটনায় ১৭০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের জাতীয় মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি অর্গানাইজেশনের প্রধান জাফর মিয়াদফার। এ ছাড়া বিস্ফোরণের পর হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে বহু লোক আহত হয়েছে বলেও ধারণা আল জাজিরার।
আইআরজিসির সঙ্গে যুক্ত তাসনিম নামের একটি ইরানি সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রথম বিস্ফোরণটি সোলাইমানির সমাধিস্থল থেকে অন্তত ৭০০ মিটার দূরে ঘটে। পরেরটি বিস্ফোরিত হয় এক কিলোমিটারের মধ্যে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলের সিকিউরিটি চেকের বাইরে এ হামলার পরিকল্পনা করা হয়।
প্রকাশিত ভিডিও থেকেও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইরানের জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থার মুখপাত্র বাবাক ইয়েকতা পারস্ত। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’
উন্নত চিকিৎসায় জন্য আহতদের কেরমান থেকে তেহরানে নিতে জরুরি সেবার হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে আইআরজিসির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন।
হামলায় ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়ালেও এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি সংবাদমাধ্যম তাসনিম।
আল জাজিরা জানায়, ঘটনাস্থলের পাশেই রাখা একটি ময়লার ঝুড়ির মধ্যে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে বোমা রাখতে দেখা গেছে বলে উপস্থিত এক নারীকে বলতে শোনা যায়।
তবে তাসনিম নিউজ এজেন্সির ধারণা, দুটি স্যুটকেসে করে বোমাগুলো অনুষ্ঠানস্থলের পাশে রেখে যাওয়া হয় এবং রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে দুটি ধারণার কোনোটির বিষয়েই তাৎক্ষণিকভাবে কোনো দাপ্তরিক ঘোষণা আসেনি।
প্রসঙ্গত,, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন কাসেম সোলাইমানি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর সোলাইমানিকে দেশটির সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হিসেবে দেখা হতো।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন সোলাইমানি। তার নেতৃত্বে দেশের বাইরে বিশেষ করে ইরাক, লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালিত হতো।
সোলাইমানিকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় সে সময় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে ইরানের শীর্ষ এই জেনারেলকে বিশ্বের এক নাম্বার সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প।
অপরদিকে ইরানের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।