ভারতের উত্তরাখণ্ডে নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গ ধসে আটকা পড়া ৪১ শ্রমিককে এখনও উদ্ধার করা যায়নি। পাইপ দিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের খাবার-পানি।
সুড়ঙ্গের ওই স্বল্প পরিসরেই হাঁটাহাটি করছেন তারা। পরিবারের সঙ্গে তাদের কথা বলানো হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। তবে এত কিছুর পরও গত ১২ নভেম্বর থেকে আটকে থাকা শ্রমিকরা কেমন আছেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, এরই মধ্যে সুড়ঙ্গের মধ্যে ৬ ইঞ্চি পাইপ ঢুকিয়ে খিচুড়ি, পানি দেয়া হয়েছে। এতদিন শ্রমিকরা ভাত, ছানা ও শুকনো ফল খেয়েই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সোমবার পাইপের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছে কলা, আপেলের টুকরো, ডালিয়া এবং খিচুড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। এই খাবারে বদল আনার কথাও ভাবছে প্রশাসন।
আটকে পড়া শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের তত্ত্বাবধানে সরকার-নিযুক্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিষেক শর্মা তাদের বেঁচে থাকার জন্য ইচ্ছাশক্তির ওপর জোর দিচ্ছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছি, মনোবল বজায় রাখার জন্য যোগব্যায়াম, হাঁটাচলা এবং তাদের মধ্যে কথোপকথনকে উৎসাহিত করছি। ভেতরে আটকে পড়াদের মধ্যে একজন গব্বর সিং নেগি, যিনি আগেও একই রকম অবস্থায় ছিলেন। তাদের মধ্যে গব্বরই সবচেয়ে বয়স্ক, গব্বর বলেছেন আটকে পড়াদের আত্মবিশ্বাস যথেষ্ট।’
খুব শিগগিরই আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে মোবাইল ফোন ও চার্জার পৌঁছে দেয়া হতে পারে। প্রশাসন পাইপের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল সংযোগ স্থাপনের জন্য এন্ডোস্কোপিতে ব্যবহৃত ক্যামেরাও আনছে।
প্রশানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটকে পড়া শ্রমিকরা তাদের প্রাতঃকৃত্যর জন্য ওই সুড়ঙ্গের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি এলাকা নির্ধারণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুড়ঙ্গের মধ্যে বিরাট ফাঁকা এলাকা রয়েছে। সেখানে প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে হাঁটাহাটির জায়গা আছে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের ডিরেক্টর আংশু মনীশ খালখো বলেছেন, ‘আমরা প্রতি আধঘণ্টা অন্তর খাবার দিচ্ছি এবং প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় যোগাযোগ বজায় রাখছি। বিভিন্ন রাজ্যের আধিকারিক, আত্মীয়স্বজন এবং চিকিৎসকরাও নিয়মিত ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, আমাদের চ্যানেলের মাধ্যমে দ্বিমুখী যোগাযোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’
সুড়ঙ্গে বদ্ধ স্থান হওয়ায় সেখানে ঠান্ডা রয়েছে, তবে মশা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নেই। শ্রমিকদের স্নান বা পোশাক পরিবর্তনে কোনো বিকল্প আছে? একজন কর্মকর্তা এ নিয়ে বলেন, ‘স্নান করা বা কাপড় পরিবর্তন সম্ভবত এখন আটকে পড়া শ্রমিকদের বিবেচনায় নেই।’
উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা থেকে উত্তরকাশীর দণ্ডালগাঁওয়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষার জন্য তৈরি করা হচ্ছে এই সুড়ঙ্গ। চারধাম প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন এ টানেলটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে উত্তরকাশী থেকে যমুনোত্রী ধাম যাওয়ার দূরত্ব কমবে ২৬ কিলোমিটার।
চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ টানেলের ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি অংশ গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে ভেঙে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে থানায় খবর দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত দেয় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।