গাজায় ইসরায়েলি হামলার ২১ দিন চলছে আজ। একের পর এক বোমা হামলায় ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত উপত্যকা। গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সব সেবা প্রবেশের পথ অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে গভীর মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যুদ্ধবিরতি বিকল্প দেখছে না জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
তবে হামাস বন্দিদের মুক্তি না দিলে গাজায় আক্রমণ অব্যাহত রাখতে অনড় ইসরায়েল। এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে হামাসও। তবে জুড়ে দিয়েছে একটি শর্ত।
রাশিয়ার কমার্স্যান্ট সংবাদপত্রকে হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বন্দিদের তারা মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে তার আগে অবশ্যই ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে।
আবু হামিদ নামের হামাসের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে শুক্রবার কমার্স্যান্টের খবরে বলা হয়, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় যাদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের সবাইকে উপত্যকার বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে বের করতে সময় প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার মস্কোতে যাওয়া হামাসের প্রতিনিধি দলের সদস্য আবু হামিদ বলেন, “যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই আমরা ‘বেসামরিক বন্দিদের’ মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছি।
“দখলকৃত অঞ্চলে সর্বশেষ আক্রমণের শুরুতে ফিলিস্তিনের কয়েকটি যোদ্ধাদের গ্রুপ অঞ্চলটিতে (ইসরায়েল) প্রবেশ করে বেশ কিছু মানুষকে বন্দি করে নিয়ে আসে। গাজা উপত্যকা থেকে তাদের খুঁজে বের করে এরপর মুক্তি দেয়ার জন্য আমাদের সময় দরকার।”
ইসরায়েলের মতে, ৭ অক্টোবর হামলার সময় ২০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে বন্দি করে হামাস।
গত কয়েকদিনে এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মুক্তিও দিয়েছে সংগঠনটি। তবে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইতোমধ্যে বন্দিদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবু হামিদ।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিকত্বের দুই বন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। এরপর সোমবার দুজন বয়স্ক ইসরায়েলি নারীকে মুক্তি দেয় তারা।
বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মিশর ও কাতার।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত রকেট হামলা করে গাজা উপত্যকার বর্তমান শাসক গোষ্ঠী হামাস। হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অন্তত ১৪০০ নাগরিক প্রাণ হারান।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় উপত্যকার একের পর এক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটি গাজা সীমান্ত দিয়ে বড় ধরনের স্থল অভিযানের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে।
এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বোমা হামলায় ৭ হাজারের অধিক বেসামরিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৯১৩ জনই শিশু। ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ।
টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সম্প্রতি মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে উপত্যকায়, তবে জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েল অনুমতি না দেয়ায় ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে গাজা।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিসরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।