ফিলিস্তিন উপত্যকায় সারা রাত ইসরায়েলের বোমা বর্ষণে ধূলিসাৎ হয়েছে বহু আবাসিক ভবন। ঘুমন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন আক্রমণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৭০-এ দাঁড়িয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত হয়েছে হাজার হাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি। গাজার হাসপাতালগুলো এখন আহত মানুষে পরিপূর্ণ। কোথাও তিল ঠাঁই নেই হাসপাতালগুলোতে। সেবাপ্রার্থীদের চাপে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে চিকিৎসক ও সেবিকাদের। এখন নতুন করে কেউ আহত হলে কীভাবে জায়গা হবে, তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গাজায় অবরোধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। এর ফলে সেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদের ‘ভাতে মারার’ এই ইসরায়েলি কূটকৌশল জাতিসংঘ আইন অনুযায়ী সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।
এমতাবস্থায় মানবিক করিডরের মাধ্যমে গাজায় জরুরি চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী শনিবার হামাসের ইসরায়েলের ওপর অতর্কিত হামলার পর থেকে এই যুদ্ধে ৭৭০ জন ফিলিস্তিনি ও ৯০০ জন বেসামরিক ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের দাবি, ইসরায়েল-সীমান্তবর্তী এলাকায় অন্তত দেড় হাজার হামাস যোদ্ধার মরদেহ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিচার্ড হেকট এ দাবি করেছেন।
রিচার্ড হেকট জানান, গাজা উপত্যকার আশপাশের সব ইসরায়েলি সম্প্রদায়কে সরিয়ে নেয়ার কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
তবে প্রাণহানির বিষয়ে ইসরায়েলের দাবির ব্যাপারে হামাসের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
গাজা উপত্যকার শাসক দল হামাস গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালালে প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। এরপর নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলও। দুই পক্ষই ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ায়।
এরই মধ্যে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে। এক পর্যায়ে সোমবার গাজায় পানি, খাবার, জ্বালানি, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের হুমকি দেয় ইসরায়েল।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজা উপত্যকার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।
২০০৭ সালে হামাস প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি বাহিনীর কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে ইসরায়েল এবং মিশর গাজার ওপর বিভিন্ন স্তরের অবরোধ আরোপ করে রেখেছে।
ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। আর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৩ হাজার ৭২৬ জন আহত হয়েছে।