কোয়ান্টম ডটস আবিষ্কার ও সংশ্লেষণের জন্য ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কারে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন লুইস ব্রুস, অ্যালেক্সেই একিমভ ও মুঙ্গি বাভেন্দি।
একিমভ ও ব্রুস স্বতন্ত্রভাবে কোয়ান্টম ডটস সৃষ্টিতে সক্ষম হন। আর বাভেন্দি রাসায়নিক উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আনেন।
যে রসায়নের জন্য বিরল এ সম্মান অর্জন করলেন বাভেন্দি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রসায়ন পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি।
শুনতে অবাক লাগলেও এক প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছে এএফপি।
৬২ বছর বয়সী তিউনিসিয়ান ও ফরাসি বংশভূত বাভেন্দি কর্মজীবনে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি অধ্যাপক। মাধ্যমিকে পড়াকালেই রসায়ন নিয়ে গবেষণায় আকৃষ্ট হন তিনি পরে কখনওই যা তার ক্যারিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
তবে ৭০-এর দশকের শেষের দিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষা জীবনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খান তিনি।
বুধবার পুরস্কার পাওয়ার পর সাংবাদিকদের বাভেন্দি বলেন, ‘আমি পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা করে অভ্যস্ত ছিলাম না কখনওই।
‘আসলে হার্ভার্ডের বিশাল আকারের পরীক্ষার হল ও এক প্রক্টরের কঠোর আচরণের কারণে সেদিন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি এতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, প্রশ্নপত্রটি হাতে পাওয়ার পর চোখে সর্ষে ফুল দেখছিলাম। প্রথম প্রশ্নটির উত্তর আমি কোনোভাবেই তখন মনে করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
‘এরপর যখন ফলাফল দেয়া হলো, তখন দেখলাম, মাত্র ২০ শতাংশ নম্বর পেয়ে আমিই ক্লাসের সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছি।’
ফলাফল পেয়ে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বাভেন্দি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘তখন আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না। শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিল- আমি এখানে আসলে কী করছি? আমার শেষ পরিণিতি আসলে কী?’
আসলে রসায়ন পছন্দের বিষয় হলেও রসায়ন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানো আর পরীক্ষার প্রস্তুতি যে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়, সেটি এ নোবেল জয়ীর বুঝতে সময় লেগেছিল। তিনি তখন বুঝতে পারেন যে, পরীক্ষা পাসের বিদ্যাটি তিনি কখনওই শেখেননি।
তবে ওই ধাক্কার পর তিনি নিজেকে সংশোধন করতে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। আর তার পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলে জানান তিনি। রসায়নে পরের সব পরীক্ষাতে একশোতে একশো পেয়েছেন বলেও জানান অধ্যাপক বাভেন্দি।
নতুন প্রজন্মের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরির ওপর জোর দিয়ে বাভেন্দি বলেন, ‘ওই ঘটনায় ভেঙে পড়লে, পড়ালেখা ছেড়ে মদ ধরলে সহজেই আমার জীবন নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিরাম বলেই আজকে এমন অর্জন ধরা দিল।
‘অপ্রত্যাশিত কোনো বিপদ এলে ধৈর্য ধরুন। জীবনে বাধা আসবেই, তাই বলে বাধা-বিপত্তিগুলো যেন নিজের জীবন ধ্বংস করতে না পারে, সে বিষয়ে যত্নবান হোন। বিপদে ভেঙে না পড়ে তা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে পরিকল্পনা করুন। তাহলেই ব্যর্থতা আপনাকে থামাতে পারবে না।’