পাকিস্তানে গরিব বাঁচাতে ধনীদের ওপর করের বোঝা চাপানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর জিও নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি কঠিন, তবে পাকিস্তানকে এটি করতে হবে। আইএমএফের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই পদক্ষেপ নিতে হবে, আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আগের কিছু ‘অপূর্ণতা’ মোকাবিলা করে পাকিস্তানকে এই পদক্ষেপ কার্যকর করতে হবে।
জিও নিউজ বলছে, পাকিস্তান আইএমএফের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এরই মধ্যে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের পুনর্গঠন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগে সংস্কার এবং কর বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।
এ প্রেক্ষাপটে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো জনজীবনকে কঠিন করে তুলেছে। বিদ্যুত এবং পেট্রলের ব্যাপক দামবৃদ্ধি হয়েছে সম্প্রতি। মুদ্রাস্ফীতিও রেকর্ড গড়েছে। কমছে রুপির দাম।
আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘পাকিস্তানের সবাইকে একটি সহজ বার্তা দিন। আমাদের প্রোগ্রামে আমরা যা চাইছি তা হলো, দয়া করে ধনীদের কাছ থেকে আরও কর সংগ্রহ করুন এবং দয়া করে পাকিস্তানের দরিদ্র জনগণকে রক্ষা করুন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের মানুষ আসলে এটিই দেখতে চায়।’
তবে কীভাবে ধনীদের ওপর কর চাপানো যায় বা এর বিস্তারিত উপায় কী তা নিয়ে তিনি কোনো কিছু জানাননি।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ২০তম প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতির পর আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি এ দেশের অর্থনীতি।
নওয়াজের কাছ থেকে বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন শহীদ খাকান আব্বাসি। সংকট কাটাতে ব্যর্থ হন তিনিও।
পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া বিপুল ঋণ নিয়ে পাকিস্তানের মসনদে আসেন ইমরান খান। সৌদি আরব এবং চীনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে কোনোভাবে পাকিস্তানকে টেনে নিচ্ছিলেন ইমরান। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তিনিও থিতু হতে পারেননি।
ইমরানকে সরিয়ে এরপর ক্ষমতায় আসেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার জোর গলায় বলেছেন, ‘পাকিস্তান খেলাপি হবে না।’ তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট তার দাবিকে সমর্থন করছে না।
ডন লিখেছে, পাকিস্তানের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। বর্তমান অর্থনীতির সবদিক বিবেচনা করে পাকিস্তান ডিফল্টের (দেউলিয়া) খুব কাছাকাছি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। বিদেশি ঋণ কিছুটা এলেও সংকট দূর হচ্ছে না পাকিস্তানের। এ অবস্থায় গত মাসে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আনোয়ারুল হক কাকার।
সংবিধান অনুযায়ী, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নভেম্বরের শুরুর দিকে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।