ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তৈরি চন্দ্রযান-৩ চাঁদের আরও কাছাকাছি। চাঁদে পা রাখার পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।
শুক্রবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের গতি কিছুটা কমিয়েছে ‘বিক্রম’, চাঁদের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঢোকার জন্যই এই গতি কমানোর কৌশল বলে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো টুইটারে জানিয়েছে, ল্যান্ডারের অবস্থা এখনও ভালো। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের পথে যাবতীয় পরিকল্পনা সফল হয়েছে।
ল্যান্ডার ‘বিক্রমে’র সঙ্গে লাগানো রয়েছে বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা। তেমনই একটি ক্যামেরা থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলে ধরেছে এটি। সেই ছবির কোলাজ শুক্রবার দুপুরে ইসরোর পক্ষে টুইট করা হয়।
ইসরো বলছে, রোববার দুপুর ২টার মধ্যে আরও একবার গতি নিয়ন্ত্রণ করবে বিক্রম।
এর আগে বৃহস্পতিবার চন্দ্রযানের মূল অংশ থেকে ল্যান্ডার আলাদা হয়ে গেছে। আগামী বুধবার ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর পাখির পালকের (সফ্ট ল্যান্ডিং) মতো চাঁদে নামার কথা।
বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-৩ থেকে ‘বিক্রম’ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
ইসরো আগে থেকেই ঘোষণা করে রেখেছে, আগামী ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে ল্যান্ডার। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, নির্ধারিত সময়ের আগে চাঁদে নেমে পড়তে পারে ‘বিক্রম’।
‘বিক্রম’-এর মূল গন্তব্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু। সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশের কোনও মহাকাশযান নামতে পারেনি। ইসরো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে ল্যান্ডার নামাতে সক্ষম হলে ইতিহাস তৈরি করবে ভারত।
ইতিহাস তৈরির সামনে রয়েছে রাশিয়াও। তাদের মহাকাশযান লুনা-২৫, ২১ তারিখ চাঁদের বুকে নামতে পারে। বিক্রমের থেকে আর একটু দক্ষিণে, চাঁদের ৭২ ডিগ্রি অক্ষাংশে নামার কথা এটির।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু এখনও অনাবিষ্কৃত। সেখানে যে আগে পা রাখবে, সেই ইতিহাসে নাম তুলে ফেলবে। এই দৌড়ে ভারত রাশিয়াকে হারাতে পারে কি না, সেদিকেই নজর বিশ্ববাসীর।
বিবিসি জানিয়েছে, গত ১৪ জুলাই ভারত চাঁদের উদ্দেশে তৃতীয় অভিযান শুরু করে। ওই দিন দুপুরে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে চাঁদের দিকে রওনা দেয় চন্দ্রযান-৩। একটি এলভিএম-৩ রকেট দিয়ে চাঁদের উদ্দেশে চন্দ্রযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
চন্দ্রাভিযানে রয়েছে একটি ল্যাণ্ডার ও একটি রোভার। ল্যাণ্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে আর রোভার চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে। ল্যাণ্ডারটি আগস্টের ২৩-২৪ তারিখে চাঁদের পিঠে নামার কথা।
ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ল্যাণ্ডারটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিক্রম’ আর রোভারটির নাম ‘প্রজ্ঞান’। এই অভিযানে সফল হলে ভারত চতুর্থ দেশ হবে, যারা চাঁদের পিঠে পৌঁছাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন চাঁদে নামতে সফল হয়েছে।
আগের অভিযানে ২০১৯ সালে ঠিক চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সময়ে ল্যাণ্ডার-রোভারটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে চন্দ্রযান-২-এর সেই অরবিটার এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বেস-স্টেশনে নিয়মিত তথ্য পাঠিয়ে চলেছে।
তৃতীয় চন্দ্রাভিযানে ল্যাণ্ডার-রোভারটির অবতরণ করার কথা চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে, যে জায়গাটি সম্বন্ধে এখনও বিস্তারিত জানা যায় না। চাঁদের পৃষ্ঠের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে চাঁদের বয়স আবিষ্কারেরও চেষ্টা হবে বলে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
দিল্লির শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্সের শিক্ষক ড. আকাশ সিনহা বলছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সম্ভাবনাও এই অঞ্চলেই বেশি।
চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই দক্ষিণ মেরু অংশেই ২০০৮ সালে জলের সন্ধান পেয়েছিল চন্দ্রযান-১।