ভাড়াটে সেনাগোষ্ঠী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রাশিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বিদ্রোহে ক্ষান্ত দেয়ায় তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।
এর আগে শনিবার প্রিগোজিন মস্কো অভিমুখে সামরিক যাত্রা থেকে তার সৈন্যদের প্রত্যাহার করেন। এতে গত কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় ঘটা ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটের অবসান ঘটল।
ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন প্রায় মুখোমুখি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ক্রেমলিন ঘোষণা দিয়েছে, তিনি বেলারুশ যাচ্ছেন। বিদ্রোহের কারণে প্রিগোজিন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো তুলে নেয়া হবে।
বিবিসির বরাতে বাসস জানায়, রক্তপাত এড়াতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রিগোজিনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
চুক্তি অনুসারে বিদ্রোহের কারণে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলো তুলে নেয়া হবে।
এ ছাড়া রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ওয়াগনার যোদ্ধাদেরও চুক্তি হবে। এর ফলে শনিবারের বিদ্রোহের কারণে তাদের কোনো সাজা হবে না।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। বেলারুশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুতিনের সম্মতিতে তাদের সঙ্গে প্রিগোজিনের আলোচনা হয়েছে।
লুকাশেঙ্কো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। বিনিময়ে ওয়াগনার যোদ্ধাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়।
রোববার সকালে প্রিগোজিন ও তার যোদ্ধাদের রোস্তভ-অন-দন শহরের সামরিক সদর দপ্তর ত্যাগ করতে দেখা গেছে। আঞ্চলিক গভর্নরও খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছে ওয়াগনার বাহিনী। পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে যখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী কোনঠাসা, তখন ওয়াগনার সেনাদের ভূমিকায় বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া।
এরপর অস্ত্র সরবরাহ এবং যুদ্ধের নীতি-কৌশল নিয়ে ওয়াগনার প্রধানের সঙ্গে রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডারদের মতবিরোধ দেখা দেয়।
ওয়াগনার প্রধান সে সময় তার সেনাদের মরদেহের মাঝে দাঁড়িয়ে অস্ত্র সংকটের কথা জানান। বলেন, রাশিয়া চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র সরবরাহ করছে না। পরিস্থিতি না বদলালে তার সেনাদের যুদ্ধের ময়দান থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
এ নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ সামনে আসে।
সর্বশেষ শুক্রবার তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার সেনাদের ওপর বিমান হামলার অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে রোস্তভ-অন-দন শহর দখলে নেয় ওয়াগনার।
পরে ওয়াগনারের অগ্রযাত্রা এবং পুতিনের পাল্টা হুঁশিয়ারি মুখোমুখি সংঘাত অনিবার্য করে তোলে। এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির এক দিনের ব্যবধানে বিদ্রোহ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয় রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাগোষ্ঠী ওয়াগনার।