ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে অভিযুক্ত করলেন তারই বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। দুর্নীতির বিষয়ে তিনি জড়িত নন বলেও দাবি তার।
সোমবার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি এ বক্তব্য তুলে ধরেন বলে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দীর্ঘ দিন পর এদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর বিশেষ আদালতে সশরীরে হাজির হয়েছিলেন অর্পিতা। তার জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। সেখানেই তার আইনজীবী দাবি করেছেন, অর্পিতা পরিস্থিতির শিকার।
আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে অর্পিতা বলেছেন, ‘আমার বাড়ি থেকে টাকা গহনা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু আমি পরিস্থিতির শিকার। মাস্টারমাইন্ড হলেন পার্থ।’
অবশ্য ইডির দাবি, অর্পিতা দায় অস্বীকার করতে পারেন না। যা হয়েছে, তার জন্য তিনি সমানভাবে দায়ী। অর্পিতা যে সব সংস্থার সঙ্গে জড়িত, সেই সব সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এই দাবি করেছে ইডি।
অর্পিতার আইনজীবী দাবি করেছেন, তার মক্কেল এ সব সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন না। সবটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ।
এজলাসে অর্পিতার আইনজীবী দাবি করেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আনা হয়েছে, সবটাই মিথ্যে। এমনকি অর্পিতাকে গ্রেপ্তারের আগে তার বয়ানও রেকর্ড করা হয়নি। তার ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন আইনজীবী।
ইডি দাবি করেছে, তদন্তে অসহযোগিতা করছেন অর্পিতা। যদিও তার আইনজীবী সেই কথা মানেননি।
আদালতে প্রশ্ন উঠেছে, অনন্ত টেক্সট ফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে অর্পিতার কী সম্পর্ক ছিল? তার আইনজীবী জানিয়েছেন, ওই সংস্থা পার্থ, তার মেয়ে সোহিনী চট্টোপাধ্যায়, জামাই অর্থাৎ পার্থের পরিবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। অর্পিতা নিয়ন্ত্রণ করতেন না। তিনি এই সংস্থা থেকে লাভবানও হননি। সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে যাদের দেখানো হয়েছে, তারা সবাই ভুয়া। পার্থই তাদের কাজ করাতেন।
আইনজীবীর অভিযোগ, সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে যাদের নাম উঠেছে, তাদের এখনও স্পর্শ করেনি ইডি। কেন? সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
২০২২ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে দক্ষিণ কলকাতায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে সাড়ে ২২ কোটি রুপি উদ্ধার করেন ইডি তদন্তকারীরা। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আরও রুপি উদ্ধার হয় তার বাসা থেকে।
অর্পিতাকে গ্রেপ্তারের আগে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয় মন্ত্রী পার্থকে। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন মন্ত্রী।
মন্ত্রী পার্থর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা উদয়ন সংঘের পূজার মডেল হয়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন। নাকতলা পার্থ চ্যাটার্জির পূজা বলে সুপরিচিত। এ ছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর আইনি উপদেষ্টা ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
তার কাছে বিপুল পরিমাণ রুপি কোথা থেকে এলো তদন্তকারীদের সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এই মডেল।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে গচ্ছিত টাকার সঙ্গে শিক্ষক দুর্নীতি মামলার কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন ইডির তদন্তকারীরা। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। কয়েক দফা রিমান্ডেও নেয়া হয় দুজনকে।