যুবসমাজকে বড় ধরনের ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচাতে বিনোদনমূলক ই-সিগারেট বা ভেপিং নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। গত দশ বছরের মধ্যে এটিই দেশটির সবচেয়ে বড় ধূমপান সংস্কার। এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে তামাকজাত পন্যের আমদানি ও মোড়কজাতকরণের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্ক বাটলার বলেন, ‘উচ্চ বিদ্যালয়ে ভেপিং একটি শীর্ষ আচরণগত সমস্যা হয়ে উঠেছে। সেইসাথে প্রথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও এটি ক্রমবর্ধমান সমস্যায় রূপ নিচ্ছে।’
তবে সঠিক পরিস্থিতিতে তামাকজাত পণ্যের চিকিৎসামূলক ব্যবহার রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
সিএনএন’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-সিগারেট মূলত নিকোটিনযুক্ত এক ধরণের তরল, যা তাপ দিয়ে ধোঁয়া তৈরি করে শ্বাস নেওয়া হয়। শুরুতে ধুমপায়ীদের তামাক ত্যাগ করতে সাহায্য করতে এটিকে ধূমপানের বিকল্প হিসেবে দেখা হলেও পরবর্তীতে কিশোর এমনকি ছোট শিশুরাও আস্তে আস্তে ভেপিংয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে।
ভেপিংয়ের চিকিৎসামূলক ব্যবহারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মার্ক বাটলার বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘থেরাপিউটিক পণ্য’ হিসাবে ভেপিং বিক্রি হয়েছিল। এটি কোনোভাবেই বিনোদনের উপকরণ ছিল না; বিশেষকরে ছোট বাচ্চাদের জন্য তো নয়ই। কিন্তু যা হওয়ার ছিল না, তাই হয়েছে।’
এটিকে ‘অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফাঁকি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নতুন আইন জারি করে বাটলার বলেন, প্রেসক্রিপশন-বহির্ভূত ভেপ আমদানি নিষিদ্ধ করা হবে। সেইসাথে ভেপ পণ্যগুলি যাতে শুধুই ধূমপান ত্যাগ করতে ব্যবহৃত হয়, তেমনভাবে ফার্মাসিউটিক্যাল পন্যের মতো করে প্যাকেজিং করা হবে।
রঙিন ও বিভিন্ন স্বাদের ভেপ নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো এমন পন্য যা আমাদের শিশুদের টার্গেট করে ললিপপ ও চকলেটের পাশাপাশি বিক্রি হয়।’
এই ঘোষণা দেওয়ার আগে শুধুমাত্র ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় ফার্মেসিগুলোতে ভেপ বিক্রির আইন ছিল। কিন্তু তা না মেনেই দেশজুড়ে বিক্রি হয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর এই পন্যটি।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তামাক ধূমপানের হার সবচেয়ে কম হওয়া স্বস্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার তরুণরা অনিয়ন্ত্রিত ভেপ ব্যবহার করে।
‘অস্ট্রেলিয়ার ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রতি ৬ জনে একজন ভেপিং করেছে। তবে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবক-যুবতীদের মাঝে এই হার আরও বেশি; প্রতি চারজনে একজন বা ২৫ শতাংশ’, জানান বাটলার।
তিনি বলেন, ‘তার চেয়েও বড় আশঙ্কার কথা হচ্ছে দেশজুড়ে এই পন্যগুলোর ব্যাপক সহজলভ্যতা। অস্ট্রেলিয়ার ৫ জন কিশোরের মধ্যে ৪ জনই বলে যে তারা স্থানীয় দোকান থেকে ভেপ কিনতে পারে।’