আসলে কী ঘটছে তা বুঝে উঠতেই সময় লেগে যায় দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের দিয়ারবাকির বাসিন্দা এক নারীর। দোলনায় চড়লে যেমন মুহূর্তেই দোল খেয়ে যান, কেঁপে ওঠেন কেউ; তেমনই গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই কেঁপে ওঠেন তিনি।
সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার যে ভূমিকম্প আঘাত হানে, তার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারী।
ভবন ধসলেও ভাগ্যক্রমে জীবন রক্ষা পেয়েছে তার। তবে পরিবার ও প্রতিবেশীসহ অনেকের খোঁজই এখনও জানেন না তিনি। তার বাসার আশপাশেরও অনেক ভবন ভেঙে গেছে। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পাওয়া দিয়ারবাকির শহরের ওই নারী অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে যাওয়ার পথে রয়টার্সকে বলেন, ‘দোলনার মতো দুলছিলাম আমরা। এক বাড়িতে আমরা নয়জন ছিলাম। আমার দু ছেলে এখনও ধ্বংস্তুপের ভেতরে। এখনও তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।’
তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরের বাসিন্দা আরডিম দুর্বিসহ সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে বলছিলেন, ‘খাঁচায় থাকা শিশু যেমন দোল খায়, আমরাও তেমনই দোল খাচ্ছিলাম। আমার ৪০ বছরের জীবনে কখনও এমন দেখিনি।’
তিনি বলেন, আমার তো মনে হয় এই শহরের কেউ এখন আর বাড়িতে নেই।
সিরিয়ার দামেস্কের প্রত্যক্ষদর্শী সামির বিবিসিকে বলেন, ‘বাড়ির দেয়াল থেকে পেইন্টিং পড়ে গেছে। আমি আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠেছি। আমরা সবাই পোশাক পরে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।’
তুরস্কের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নিহাত আলতুন্ডাগ গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমার চারপাশে ধ্বংস হওয়া সব ভবন। এসব ভবনে আগুন লেগে যায়। আমি এখন যেখানে আছি, সেখান থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে একটি বিল্ডিং ধসে পড়েছে।’
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এএফএডি) বরাত দিয়ে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারসিক জেলায়। উৎপত্তিস্থলে এর গভীরতা ছিল ৭ কিলোমিটার।
একই ভূমিকম্পে কাঁপে সিরিয়াও। পরে দু দেশেই আবারও আঘাত হানে ভূমিকম্প (আফটার শক)। এতে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষের। তুরস্কে ২৮৪ জন এবং ২৩৭ জনের মতো প্রাণহানি সিরিয়ায়।