শ্রীলঙ্কার পরিণতির দিকে এগুচ্ছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিও দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, যা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে দেশটির গণমাধ্যমেও।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার বৈদেশির মুদ্রার রিজার্ভের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে দেশটির অর্থনীতিবিদদের। দেশটির হাতে কেবল ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আছে। এ অর্থ দিয়ে টেনেটুনে কেবল এক মাস চলা যাবে।
সংকট উত্তরণে চীন ও সৌদি আরবের দিকে তাকিয়ে ছিল পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও আরও ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। এর মধ্যে দুই মিত্র দেশ থেকে সহায়তা মিলবে কি না, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিতও পাচ্ছে না শাহবাজ সরকার।
আইএএফ ঋণ দিতে যে শর্তগুলো দিয়েছিল, সেগুলো পূরণে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান। আগামী বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির যে নবম পর্যালোচনা বৈঠক হতে যাচ্ছে, সেখান থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশায় দিন গুনছে তারা। যদি ঋণ না পাওয়া যায়, তবে খাদে পড়া ছাড়া উপায় থাকবে না পাকিস্তানের।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছিল শ্রীলংকার রাজাপাকসে সরকার। বিদেশি ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে এপ্রিলে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে ভারত মহাসাগরের দেশটি।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বৃহস্পতিবার স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান জানায়, সাত দিনের ব্যবধানে ২৯৪ মিলিয়ন ডলার কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত সপ্তাহে ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল পাকিস্তানের হাতে।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ২০তম প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতির পর আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি পাকিস্তানের অর্থনীতি। নওয়াজের কাছ থেকে বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন শহীদ খাকান আব্বাসি। সংকট কাটাতে ব্যর্থ হন তিনিও।
পূর্বসূরীদের রেখে যাওয়া বিপুল ঋণ নিয়ে পাকিস্তানের মসনদে আসেন ইমরান খান। সৌদি আরব এবং চীনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে কোনোভাবে পাকিস্তানকে টেনে নিচ্ছিলেন ইমরান। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দে তিনিও থিতু হতে পারেননি।
ইমরানকে সরিয়ে এরপর ক্ষমতায় আছেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফ। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার জোর গলায় বলছেন, ‘পাকিস্তান খেলাপি হবে না।’ তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট তার দাবিকে সমর্থন করছে না।
দেশটির প্প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ডন লিখেছে, পাকিস্তানের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। বর্তমান অর্থনীতির সবদিক বিবেচনা করে পাকিস্তান ডিফল্টের (দেউলিয়া) খুব কাছাকাছি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শেহবাজের নেতৃত্বাধীন পিডিএম সরকার এপ্রিলে ইমরানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার থেকে ক্ষমতা বুঝে নেয়। সে সময় পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আট মাসে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
দেউলিয়ার আশঙ্কা যে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না তা ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দর দেখেই অনুমান করা যায়। এপ্রিলে এক ডলার বিক্রি হতো ১৮০ রুপিতে। বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক বাজারে তা ২২৬ রুপিতে লেনদেন হয়েছে। হারের এই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ইতোমধ্যে অফিসিয়াল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
Total liquid foreign #reserves held by the country stood at US$ 11.71 billion as of December 23, 2022. For details https://t.co/WpSgomnKT3 pic.twitter.com/cVUHF6ZBg9
— SBP (@StateBank_Pak) December 29, 2022আনুমানিকভাবে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে পাকিস্তান। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, স্টেট ব্যাংক পরিচালিত নিম্ন বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে এই ৩০০ মিলিয়ন ডলারকে হুন্ডিতে সরিয়ে দিয়েছে।
মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আরও রেমিট্যান্স ‘চোরাইবাজারে’ যাবে। ফলে চলতি অর্থবছরের শেষদিকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার হারাবে পাকিস্তান।
দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। জুলাই-নভেম্বর অর্থবছরে পাকিস্তানে ৪৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ শতাংশ কম।