বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কে এই ‘বিকিনি কিলার’

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:৪০

তিহার জেলের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট জেপি নাইথানি বলেন, ‘তাকে জেলের মধ্যে বিভিন্ন মেজাজে দেখেছি। স্থানীয় আদালতে তার আইনি লড়াই, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের সঙ্গে তার বোঝাপড়া। তার বই ‘সার্পেন্টাইন’ বেস্টসেলার হয়েছিল। নারীসঙ্গ ভীষণ উপভোগ করতেন তিনি। অনেক নারী বিদেশ থেকে আসতেন। তাদের কেউ কেউ তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এমনই ছিল তার ব্যক্তিত্ব।’

১৯ বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেলেন ‘কুখ্যাত’ সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ। স্বাস্থ্যগত কারণে নেপালের সর্বোচ্চ আদালত বুধবার তাকে মুক্তি দেয়। এর আগে ভারতের তিহার জেলে দুই দশকের বেশি সময় বন্দি ছিলেন তিনি। ৭০-এর দশকে এশিয়াজুড়ে একাধিক খুনের মামলায় দোষী ছিলেন শোভরাজ।

রায়ে বলা হয়, শোভরাজকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা বন্দির মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যদি কারাগারে রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো বিচারাধীন মামলা না থাকে, তবে এই আদালত আজকের (বুধবার) মধ্যে তাকে মুক্তি দেয়ার এবং ১৫ দিনের মধ্যে তার দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিচ্ছে।

৭৮ বছর বয়সী শোভরাজকে নিয়ে ২০২০ সালে নেটফ্লিক্স এবং বিবিসি প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সার্পেন্ট’ নির্মিত হয়। সাজার ভয়ে ছদ্মবেশ ধারণ এবং জাল পরিচয়ে পালিয়ে বেড়াতে জুড়ি ছিল না শোভরাজের।

বৃহস্পতিবার সকালে জেল থেকে ছাড়া পান শোভরাজ। শিগগিরই তিনি নিজ দেশ ফ্রান্সে চলে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুরুর জীবন

ফরাসি অধিকৃত সাইগন অঞ্চলে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং ভিয়েতনামের দোকান সহকারীর ঘরে জন্ম শোভরাজের। তবে তার জৈবিক পিতা কখনোই তাকে স্বীকার করেননি। বলা হয়ে থাকে, বিষয়টি শোভরাজের জীবনে ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল।

পরে তার মা একজন ফরাসি সৈনিককে বিয়ে করে ফ্রান্সে চলে যান। মায়ের সঙ্গে শোভরাজও পাড়ি জমান সেখানে। শৈশবেই ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন শোভরাজ। কৈশোরে তার জেলে আসা-যাওয়া ছিল নিয়মিত ঘটনা।

যেভাবে তিনি ‘বিকিনি কিলার’

থাইল্যান্ডের পাতায়া বিচে ১৯৭৫ সালে বিকিনি পরা এক নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। ওই নারীই ছিলেন শোভরাজের প্রথম শিকার। এরপর থেকে ‘বিকিনি কিলার’ হিসেবে শোভরাজের নাম ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি মানুষকে খুন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন শোভরাজ। বলেছেন, মাদক খাইয়ে, শ্বাসরোধ করে এবং পিটিয়ে খুনগুলো করেছেন তিনি। কাউকে কাউকে আবার পুড়িয়েও মেরেছেন। তার টার্গেট ছিল ভারত এবং থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা পশ্চিমারা; বিশেষ করে নারী।

শুরুতে তিনি তার শিকারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তেন। একপর্যায়ে তাদের বিষ মেশানো পানীয় খাইয়ে হত্যা করতেন। কখনও কখনও তার পুরুষ ভিকটিমদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন শোভরাজ।

নেপালের জেলে বন্দি থাকার সময় তিনি তার আইনজীবীর মেয়ে নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেছিলেন; যিনি শোভরাজ থেকে ৪৪ বছরের ছোট।

স্ত্রী নিহিতা বিশ্বাসের সঙ্গে চার্লস শোভরাজ

ধারাবাহিক গ্রেপ্তার এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

শুরুর দিকে শোভরাজকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে হয় তিনি পালিয়ে যেতেন কিংবা ঘুষের বিনিময়ে শাস্তি এড়িয়ে যেতেন।

১৯৭৬ সালে কয়েকজন ফরাসি ছাত্রকে বিষ প্রয়োগে হত্যার দায়ে ভারতের তিহার জেলে ১০ বছর বন্দি ছিলেন শোভরাজ। এসব ছাত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তাদের ট্যুর গাইড হয়েছিলেন শোভরাজ।

সে সময় তিহার জেলের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন জেপি নাইথানি। শোভরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি লেখেন, ‘তাকে জেলের মধ্যে বিভিন্ন মেজাজে দেখেছি। স্থানীয় আদালতে তার আইনি লড়াই, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের সঙ্গে তার বোঝাপড়া। তার বই ‘সার্পেন্টাইন’ বেস্টসেলার হয়েছিল। নারীসঙ্গ ভীষণ উপভোগ করতেন তিনি। অনেক নারী বিদেশ থেকে আসতেন। তাদের কেউ কেউ তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এমনই ছিল তার ব্যক্তিত্ব।’

১৯৮৬ সালে শোভরাজ যখন তার কারাগারের মেয়াদ কাটিয়ে মুক্তি পেতে চলেছেন, তখন তিনি থাইল্যান্ডে ৬টি হত্যার ঘটনায় ওয়ান্টেড ছিলেন। এই অবস্থায় একদিন শোভরাজ কারাগারের কর্মকর্তাদের ‘জন্মদিনের মিষ্টি’ খাওয়ান। তারপর পালিয়ে যান তিহার জেল থেকে। পরে অবশ্য তাকে গোয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বিবিসির একটি নিবন্ধে বলা হয়, ব্যাংককে প্রত্যর্পণ এড়াতেই শোভরাজ জেল থেকে পালিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন ব্যাংককে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।

অবশেষে ১৯৯৭ সালে তিহার জেল থেকে মুক্তি পান শোভরাজ। তবে এ সময়ে ব্যাংককে তার বিচারের ২০ বছরের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল।

২০১৪ সালে শোভরাজ স্বীকার করেন, তিহার জেলে থাকাকালীন সন্ত্রাসী মাস্টারমাইন্ড মাসুদ আজহারের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল। তালেবানের জন্য অস্ত্র বিক্রির কথাও তিনি স্বীকার করেছিলেন।

কাঠমান্ডুতে গ্রেপ্তার

তিহার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শোভরাজ ফ্রান্সে যান। ২০০৩ সালে কাঠমান্ডুতে ফেরেন; যেখানে ১৯৭৫ সালে দুই বিদেশি ভ্রমণকারীকে হত্যা দায়ে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

নেপালে দুটি আলাদা বিচারে দুই দফায় যাবজ্জীবন সাজা হয় এই সিরিয়াল কিলারের। শোভরাজের আইনজীবীরা গত বছর বার্ধক্যজনিত কারণে তার দ্রুত মুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। তবে সে বছর নেপাল সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।

নেপাল সরকার জানায়, বয়স, রোগ বা অন্যান্য কারণে অপরাধীকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো বিধান আইনে নেই। কারাদণ্ড কমানো গেলেও হত্যা, চোরাচালান, ধর্ষণের মতো মামলায় তা করা যাবে না।

ভাল আচরণ এবং স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তি

আল জাজিরা জানায়, ২০১৭ সালে শোভরাজের হৃদযন্ত্রে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রপচার হয়েছিল। সেই সময়েই তার ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন ছিল।

বুধবার তার মুক্তির আদেশটি নেপালের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল; যা যেসব বন্দী জেলে ভাল আচরণ করছেন এবং যাদের সাজার ৭৫ ভাগ পূর্ণ হয়েছে, তাদের আগাম মুক্তির অনুমতি দেয়।

এ বিভাগের আরো খবর