সম্ভাব্য বিক্ষোভের মুখোমুখি যুক্তরাজ্যে সেনা মোতায়েন এবং পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে ইরান সরকার। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রোববার মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমাদের দ্বৈত মানদণ্ডের জন্য নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমাদের অপছন্দের কোথাও দাঙ্গা হলে, তখন সেটাকে তারা ভালো চোখে দেখে এবং সমর্থন দেয়।
জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর দাবিতে যুক্তরাজ্যে অনেকদিন ধরেই বিক্ষোভ করে আসছেন বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীরা।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান নাদিম জাহাউই বলেছেন, বড়দিন ঘিরে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলার ধাঁচ কমাতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বিবেচনা করছে সরকার।
জাহাউই স্কাই নিউজের সোফি রিজ অন সানডে প্রোগ্রামকে জানান, প্রস্তাব অনুযায়ী সামরিক কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স চালানোর পাশাপাশি সীমান্তেও দায়িত্ব পালন করবেন।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, বড়দিন ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সামরিক বাহিনী, সাধারণ নাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা বিমান ও সমুদ্রবন্দরের দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
ঘোষাণাটি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক মন্দা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বিভিন্ন সেক্টরে হাজার হাজার মানুষ এমন একসময়ে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দাবিতে ধর্মঘটে যাচ্ছে, যখন সরকার বারবার বলছে ধর্মঘটে যাওয়ার সময় এখন না।
জাহাউই স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘এখন ধর্মঘটের সময় না।
‘আপনি যদি মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে কিছু ক্ষেত্রে অর্থ প্রদান করেন, তবে তা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। এতে মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘায়িত হবে। কম আয়ের লোকজন সবচেয়ে বিপদে পড়বে। ইউনিয়নগুলোকে তাই বলতে চাই, এখন যে ধর্মঘটের সময় না সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। এখন সময় চেষ্টা করার, আলোচনায় বসার।’
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার দাবি, প্রতিবাদকারীদের স্বার্থপর সংখ্যালঘু। তারা আইন ভঙ্গ করছে। তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে এক বৈঠকের পর দেয়া বক্তব্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমার কথা হচ্ছে যারাই আইন ভাঙবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করা উচিত।
"ইতোমধ্যে পুলিশকে ‘অবৈধ’ বিক্ষোভ দমন করার জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পুলিশের প্রতি সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।"
বিক্ষোভের প্রতি ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গি ইরানের পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছে। তারা তেহরান এবং লন্ডন কীভাবে অস্থিরতা মোকাবিলা করছে, তার মধ্যে তুলনা করেছে। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর গত দুই মাস ধরে ইরানে অস্থিরতা চলছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সহিংস অস্থিরতা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করছে। তারপরও অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ইরান পুলিশের ক্ষমতা সীমিত করেছে।
ইরান সরকারের মানবাধিকার বিষয়ে সমালোচনা করছে পশ্চিমারা, বিশেষ করে জার্মানি। দেশটি জাতিসংঘে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে শুরু থেকেই পশ্চিমাদের সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইরান।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি রোববার মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমাদের দ্বৈত মানদণ্ডের জন্য নিন্দা করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পুলিশকে নতুন ক্ষমতা দেয়ার ঘটনায় দেশটির সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কানানি টুইটারে বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় জনগণের বিক্ষোভগুলো একদমই অযৌক্তিক। এগুলোকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। তবে এসব দেশের অপছন্দের কোথাও দাঙ্গা হলে, তারা তখন সেটাতে সমর্থন দেয়। ভালো বলে।’
এ সময় তিনি একটি বিখ্যাত ফার্সি প্রবাদও ব্যবহার করেন; বাংলায় অনুবাদ করলে যার মানে দাঁড়ায়- ‘মৃত্যু ভালো তবে তা প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে হলেই’। এটি এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে লোকেরা অন্যদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া খারাপ কিছুতে আনন্দ পায়।’