নারীর পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে ইরানে চলা বিক্ষোভের জন্য আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের দায়ী করছে তেহরান। অন্যদিকে ওয়াশিংটনও বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আর কিছু সময় পর বিশ্বকাপে মাঠে গড়াতে যাচ্হছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই এই ম্যাচ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।
তবে এই ম্যাচ ঘিরে ইতিবাচক কিছুই ভাবছেন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সমর্থক।
ইংল্যান্ডের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরেছে ইরান। পরের ম্যাচ ওয়েলসের সঙ্গে ২-০ গোলে জয় পায় তারা। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে গোল শূন্য ড্র করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই কাতার বিশ্বকাপে টিকে থাকতে মঙ্গলবারের ম্যাচটি দুই দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিকভাবে হিজাব না করার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে রোববার যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল ফেডারেশন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইরানের একটি পতাকা পোস্ট করে; যেখানে ইরানের পতাকার মাঝে থাকা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতীক বাদ দেয়া হয়।
এ ঘটনায় পতাকা বিকৃতির অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বকাপ থেকে বের করে দেয়ার আহ্বান জানায় তেহরান। পতাকা বিকৃতির ঘটনায় অবশ্য ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হেড কোচ গ্রেগ বেরহাল্টার।
তবে এসব কিছু ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সমর্থকরা এই ম্যাচকে সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ হিসেবেই দেখছেন।
ফ্রান্সে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তারপর সেই ম্যাচেই হয়েছিল দু'দলের প্রথম দেখা।
সে ম্যাচের আগে অভূতপূর্ব এক ঘটনা ঘটেছিল। উত্তেজনায় পানি ঢেলে ইরানি খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন সাদা গোলাপ। তোলা হয়েছিল গ্রুপ ছবিও।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে নিয়ে আমেরিকা-ইরান বংশোদ্ভূত বাসিন্দা ৩১ বছরের শেরভিন শরিফি জানান, তার কাছে জাতীয় দল ও বিভিন্ন ক্লাবের ১০৭টি জার্সি রয়েছে। যার মধ্যে ইরানের ফুটবল দলেরই ৪০ থেকে ৪৫টি।
শরিফি বলেন, ‘আমি একরকম আসক্ত। এটিই আমার জীবন। আমি এ জন্যই বাঁচি।’
আমেরিকার টেক্সাস থেকে ইরানকে সমর্থন দিতে কাতারে এসেছেন শরিফি এবং তার বন্ধু।
আমেরিকান-ইরান বংশোদ্ভূত শেরভিন শরিফি। ছবি: সংগৃহীত
দোহার একটি মার্কেটে দাঁড়িয়ে শরিফি বলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে ইরানি খেলোয়াড়দের এই খেলাটির প্রতি আরও বেশি আবেগ রয়েছে। কারণ তারা কেবল নিজেদের সাফল্যের জন্য খেলছে না। তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ৮ কোটি মানুষ।’
শরিফি জানান, ১৯৯৮ সালের যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের ম্যাচ দেখেই তিনি ফুটবলকে ভালোবেসেছেন। সেই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ইরান। সাত বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে সেই ম্যাচ দেখেছিলেন শরিফি।
ওই ম্যাচের আগে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও ইরানের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি চাননি যে ইরানের ফুটবলাররা আমেরিকারন ফুটবলারদের সঙ্গে করমর্দন করুক।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কাতার বিশ্বকাপ দেখতে এসেছেন কানাডিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র বংশোদ্ভূত ৩৭ বছরের ভিগনেশ রাম।
বাবাকে নিয়ে কাতার বিশ্বকাপ দেখতে এসেছেন ভিগনেশ রাম। ছবি: সংগৃহীত
তিনি বলেন, ’আন্তর্জাতিক ভ্রমণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল সমর্থকরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এটি মানুষকে এমনভাবে একত্রিত করে যা সত্যিই অর্থপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র দলটি কখনই দুর্দান্ত ছিল না, তাই হারানোর মতো কিছু নেই। আমার মনে হয় এই খেলার মাধ্যমে দুই দেশের সমর্থকদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।’
শরিফি মনে করেন ফুটবল মানুষের সহানুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে জাতীয় দলকে রাজনীতির বাইরে রাখা কঠিন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন শুধু ফুটবলের জন্য আসছে না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। আশার কথা হলো, আমেরিকান ভক্তরা ইরানি জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল হচ্ছে। কারণ সরকার থেকে ইরানের জনগণ আলাদা।’