পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছেন, তাকে হত্যাচেষ্টায় অভিযুক্ত তিনজন আবারও তার ওপর হামলার অপেক্ষায় রয়েছে।
শনিবার রাওয়ালপিন্ডিতে এক সমাবেশে ইমরান এমনটি জানান। লং মার্চে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এটি প্রথম সমাবেশে ভাষণ। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
- আরও পড়ুন: হামলায় যে ৩ জনকে সন্দেহ করছেন ইমরান খান
আগাম নির্বাচনের দাবিতে চলতি মাসের শুরুতে পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে আয়োজিত ইসলামাবাদ অভিমুখী লং মার্চে ইমরান খানের ওপর বন্দুক হামলা চালানো হয়। তার পায়ে গুলি লাগে। এই হামলার জন্য তিনজনকে দায়ী করেন ইমরান খান। তারা হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ও সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল।
রাওয়ালপিন্ডিতে দেয়া ভাষণে ইমরান খান জানান, তিনি মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। হামলার সময় তার মাথার ওপর দিয়ে বুলেট চলে যায় বলেও জানান পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
ইমরান বলেন, ‘যখন আমি পড়ে গেলাম, তখনই বুঝতে পেরেছি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন।’
সমাবেশে ভাষণে দলের কর্মীদের মৃত্যুভয় কাটানোর আহ্বান জানান পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘ভয় পুরো জাতিকে দাস বানিয়ে রাখে।’
কারবালায় হযরত ইমাম হাসান (রা.) শহীদ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে ইমরান বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধের ভয়ে সেদিন কুফাবাসী তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।’
পাকিস্তানের কোনো সংসদেই পিটিআইর আর কোনো সদস্য থাকবে না বলেও জানান ইমরান । তিনি বলেন, ‘আমরা এই ব্যবস্থার অংশ হব না। আমরা সবাই এসব দুর্নীতিগ্রস্ত সংসদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অতীত থেকে শিক্ষা নেয় না বলেও মন্তব্য করেন ইমরান খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তবে জনগণ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা পিটিআইয়ের সঙ্গে আছে।
আরও পড়ুন: শেখ মুজিবের মতো লড়ছি: ইমরান খান
ইমরান খান বলেন, ‘আমার মনে আছে পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটেছিল…আমরা তাদের সঙ্গে বা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ন্যায়বিচার করিনি এবং আমরা অতীত থেকেও শিক্ষা নেইনি।’
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, সম্পদের অভাব নয়, বরং শুরু থেকেই আইনের শাসন না থাকার কারণে তার দেশে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
শরিফ ও জারদারি পরিবার জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ইমরান।
ভাষণে করোনা মহামারিতে নিজ দলের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, ‘ওই সময় লকডাউন দেয়ার জন্য বিরোধীরা অনবরত বলে আসছিল। তবে দিনমজুর এবং শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে তা দেয়া হয়নি।’
পাকিস্তানের ক্ষমতাশালীদের আইনের আওতায় আনতে না পারাকে নিজের ব্যর্থতা বলেও জানান পিটিআই প্রধান। তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের আইনের আওতায় আনতে পারত, তারা তা করেনি। বরং তারা অপরাধীদের সঙ্গে চুক্তি করছে।’
ভাষণে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে ইমরান বলেন, ‘দেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, ইমরান শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছে।’