বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের জাতীয় ফুটবল দল জাতীয় সংগীত গাইলেও, তা ভালোভাবে নেয়নি ম্যাচ দেখতে আসা ইরানি সমর্থকরা। তারা দুয়োধ্বনিতে জানিয়েছে প্রতিবাদ।
এই সপ্তাহের শুরুতে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে ইরানের সরকার বিরোধীদের সমর্থনে জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে বিরত ছিল ফুটবলাররা। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে ইরানের জাতীয় ফুটবলাররা।
ওয়েলসের বিপক্ষে শুক্রবার মাঠে নামে ইরান। ম্যাচ শুরুর আগে রীতি অনুযায়ী বাজানো হয় জাতীয় সংগীত। ইরানের ফুটবলাররা তাতে সুর মেলান। এ সময় গ্যালারিতে উপস্থিত ইরানি সমর্থকদের দুয়োধ্বনি দিয়ে নিজেদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা যায়।
হিজাব ইস্যুতে গ্রেপ্তার মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল ইরান। ১৯৭৯ ইসলামি বিপ্লবের পর যেটি ইরানের শাসকদের সামনে শক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিক্ষোভ দমনে ইরানের পুলিশ তীব্র শক্তি প্রয়োগ করছে। এতে বাড়ছে হতাহত, গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত এক হাজার মানুষ।
- আরও পড়ুন: মাহসার মৃত্যুর ৪০তম দিনে ফের উত্তাল ইরান
শুক্রবার ম্যাচ শুরুর আগে একদল ইরানি দর্শক স্টেডিয়ামের ভেতর বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। এক নারী সমর্থক চোখে গাঢ় লাল রঙ দিয়ে কান্নার ট্যাটু করে খেলা দেখতে আসেন। তার হাতে ছিল ইরানের জাতীয় দলের জার্সি; যেটার পেছনে লেখা ‘মাহসা আমিনি’। ওই জার্সির নম্বর ২২। এই ২২ মাহসার বয়সকে নির্দেশ করছে।
তার পাশে থাকা একজন যুবক ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ লেখা একটি টি-শার্ট পরেছিলেন। এটি ইরান বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান স্লোগান।
কাতার বিশ্বকাপের আগে ইরানের বাস্কেটবল দলের পাশপাশি বেশ কয়েকটি জাতীয় দল চলমান বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে বিরত ছিল।
ইরানের জাতীয় ফুটবল দল ‘টিম মেলি’ নামে পরিচিত। ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় ফুটবল দলকে নিয়ে গর্ব করত ইরান। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে এই দলটি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ইরানের বিক্ষোভকারীরা এখন ফুটবল দলকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
ইরানের অস্থিরতা সম্পর্কে বৃহস্পতিবার জাতীয় দলের স্ট্রাইকার মেহেদি তারেমি বলেন, ‘আমরা ফুটবল খেলতেই কাতারে এসেছি।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে খেলোয়াড়রা জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকার করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো চাপের মধ্যে নেই।’
- আরও পড়ুন: আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় ইরানে ফুটবলার গ্রেপ্তার
- আরও পড়ুন: ইরান বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় মৃত্যুদণ্ড
দোহা সফরের আগে দলটি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে দেখা করেছিল। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তারা ফটোসেশনও করে, যার একটি ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবিতে দেখা যায় রাইসির সামনে মাথা নত করে আছে; যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক হৈচৈ চলছে।