ফ্রিজে সঙ্গী শ্রদ্ধা ওয়াকারের দেহের টুকরো রাখা অবস্থায়ই ফ্ল্যাটে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন আফতাব আমিন পুণাওয়ালা।
দিল্লির মেহরাউলির চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মঙ্গলবার এ খবর জানা গেছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে।
দিল্লি পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, ১৮ দিন ধরে ফ্রিজে রাখা ২৬ বছরের শ্রদ্ধার দেহের টুকরো আফতাব যখন বিভিন্ন জায়গায় ফেলে আসছিলেন, সেই সময়েই ডেটিং অ্যাপে পরিচয় হওয়া একাধিক নারীর সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাটেই যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, রুমে নিয়মিত ফ্রেশনার দেয়ায় এবং ধূপকাঠি জ্বালানো থাকায় ফ্ল্যাটের ভেতরে ফ্রিজেই মরদেহ থাকার বিষয়টি টের পায়নি তাদের কেউ।
মুম্বাইয়ের একটি বহুজাতিক কোম্পানির কল সেন্টারে কাজ করতেন শ্রদ্ধা। সেখানেই আফতাবের সঙ্গে তার পরিচয়। কিছুদিনের মধ্যে তারা ডেটিং শুরু করেন।তবে শ্রদ্ধার পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তারা দিল্লিতে পালিয়ে এসেছিলেন এপ্রিল মাসে। এরপরই মে মাসেই খুন করা হয় শ্রদ্ধাকে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আফতাব জানান, শ্রদ্ধা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এদিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্পর্কে থাকা অবস্থাতেই ডেটিং অ্যাপে একাধিক নারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। আর তা নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য লেগেই থাকত।
দিল্লি পুলিশ জানায়, ১৮ মে ঝগড়ার একপর্যায়ে শ্রদ্ধাকে খুন করেন আফতাব। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েব সিরিজ ‘ডেক্সটার’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরদিন ৩০০ লিটারের ফ্রিজ কিনে তাতে শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করে ঢুকিয়ে রাখেন।
পুলিশ আরও জানায়, সঙ্গীকে হত্যার পর গুগল সার্চ করে আফতাব জেনেছিলেন কীভাবে রক্ত পরিষ্কার করতে হয়। একই সঙ্গে মরদেহ টুকরো করার সুবিধার্থে মানবদেহের গঠনতন্ত্র নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করা আফতাব কয়েক বছর আগে বাবুর্চি হিসেবে এক জায়গায় কাজ করতেন। কীভাবে মাংস কাটতে হয় তা নিয়ে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ ছিল এই তরুণের।
শ্রদ্ধার এক বন্ধু সেপ্টেম্বরে তার ভাইকে জানায়, মোবাইল ফোন দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শ্রদ্ধার। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চেক করে তার পরিবার দেখতে পায় এ সময়ের মধ্যে শ্রদ্ধার সেখানে কোনো আপডেট নেই।
চলতি মাসে শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়াকার মুম্বাই পুলিশের কাছে একটি নিখোঁজ মামলা করেন।
প্রাথমিক তদন্তে শ্রদ্ধার শেষ অবস্থান দিল্লিতে পাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে মামলাটি দিল্লি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করে মুম্বাই পুলিশ।
শ্রদ্ধার বাবা পুলিশের কাছে সন্দেহভাজন হিসেবে আফতাবের নাম প্রকাশ করেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে আফতাবের সম্পর্কের বিষয়টিও তিনি জানান।
৮ নভেম্বর মেয়ের খোঁজে দিল্লি আসেন বিকাশ মদন ওয়াকার। তবে মেয়ের ফ্ল্যাটটি তিনি তালাবদ্ধ পান। পরে মেহরাউলি পুলিশের কাছে গিয়ে তিনি অপহরণের অভিযোগ করেন। অভিযোগে বিকাশ জানান, তার মেয়েকে প্রায়ই মারধর করতেন আফতাব।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার আফতাবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেরার মুখে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন।
পুলিশ জানায়, জঙ্গল থেকে কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেগুলো মানুষের দেহাবশেষ কি না, তা জানা যায়নি। মরদেহ বিচ্ছিন্নে ব্যবহৃত ছুরিটি এখনও পাওয়া যায়নি। আফতাবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে পুলিশ।