নিয়োগের দাবিতে চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর হাত কামড়ে দেয়ার ঘটনায় উত্যপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। দুদিন আগে অরুণিমা পাল নামে এক তরুণীর হাতে কামড় বসান পুলিশের এক কনস্টেবল। এ ঘটনায় পুলিশের ‘সংযম’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির।
২০১৪ সালের টেট (টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট)-এ উত্তীর্ণরা বুধবার কলকাতার রবীন্দ্র সদনের পাশে এক্সাইড মোড়ে বিক্ষোভ করছিলেন। অরুণিমাও সেদিন অংশ নিয়েছিলেন কর্মসূচীতে। ক্যামাক স্ট্রিটে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের সামনে নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা অভিষেক। তার অফিসের সামনে বিশৃঙ্খলা দমনে কলকাতা পুলিশ শুরু করে ধড়পাকড়। ‘টেনে-হিঁচড়ে’ বিক্ষোভরতদের প্রিজন ভ্যানে তুলে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ।
এক পর্যায়ে অরুণিমা পাল নামে আন্দোলনরত ওই প্রার্থী অভিযোগ করেন, এক পুলিশকর্মী তার হাতে কামড় দিয়েছে।
সাংবাদিকরা ছুটলেন ওই পুলিশের কাছে। প্রশ্ন করা হলো এ কাজ কেন করলেন তিনি। পুলিশ সদস্যের সাবলীল উত্তর- আগে তাকে কামড় দিয়েছেন অরুণিমা।
ওদিকে অরুণিমার দাবি, এই পুলিশকর্মী তাকে দু-দুবার কামড়ে দিয়েছে।
চাকরিপ্রার্থীকে পুলিশের কামড়ে দেয়ার ছবি সংবাদ ও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে পুলিশকে কামড় দেয়ার ছবি পাওয়া যায়নি। নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে লালবাজার পুলিশ এখন ঘটনাস্থলের সব সিসিটিভি ফুটেজ হাতড়ে বেড়াচ্ছে।
রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিশ কামড়ে দিল কেন... এটাই আমার কাছে স্পষ্ট নয়। যদি কামড়ে থাকে, তাহলে সেটা পুলিশের কোড অফ কন্ডাক্টে আটকে যায়। কামড়ে দেয়াটা পুলিশের কন্ডাক্টে পড়ে না।’
বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘পুলিশকে কিছু একটা করতেই হত। যদি কেউ রাস্তা বা অফিস অবরোধ করে, তাহলে পুলিশকে কিছু করতেই হয়। তবে এরকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন পুলিশ নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত করছে। সংযত থাকলেও, একটা ছোট্ট ঘটনার জন্য পুলিশ কলঙ্কিত হলো।’
পিংলার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতি অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তার ভাষ্য, ‘পুলিশকে যদি কেউ কামড়ে দেয়, তাহলে পুলিশ কামড়ে দেবে না তো কি রসগোল্লা ছুড়বে?’
একই সুরে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্ররোচনা দিলে অনেক কিছুই হতে পারে।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কামড় কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এবার তো মনে হচ্ছে অজিত (তৃণমূল সাংসদ) কামড়ে দেবেন। কোনো সভ্য দেশে এমন হতে পারে! পুলিশকে কী কামড়ানোর ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে! সরকার না মানলেও, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আসলে পুলিশের দোষ নয়, তাদের যেভাবে দিনরাত রগড়ানো হচ্ছে, তাতে হতাশা তৈরি হচ্ছে।’
তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতির মন্তব্য প্রসঙ্গে অরুনিমা পাল বলেন, ‘কী বলব আমি! কিছু কথার উত্তর অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়, রুচিতে বাধে। এসব সমাজকে খারাপ বার্তা দিচ্ছে।’
চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকালে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান অরুনিমা পাল। পরীক্ষার পর চিকিৎসক আঘাতের কারণ ‘হিউম্যান বাইট’ উল্লেখ করেছেন।