বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুর মৃত্যুতে চীনে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৪ নভেম্বর, ২০২২ ১০:১১

শিশু ওয়েংসুয়ানের অবস্থার অবনতি দেখে বাবা কঠোর লকডাউনের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে কমিউনিটি কম্পাউন্ডে যান। তবে কমপাউন্ডের গেট পাহারাদার তাকে বাইরে যেতে না দিয়ে উল্টো স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করতে বলে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোনের পর ফোন করেও একঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ায় শিশুর বাবা আর অপেক্ষা না করে কোভিড চেকপয়েন্টের বেষ্টনি ভেঙেই ছেলেকে বাইরে নিয়ে যান।

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় ল্যানঝোউয়ে মঙ্গলবার একটি বাড়িতে গ্যাস লিক হয়ে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, লকডাউনের কারণে সময়মত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশু ওয়েংসুয়ানের।

খবরটি জানা গেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও সিএনএন এর প্রতিবেদনে।

সিএনএন ও বিবিসি জানায়, ঘটনাটি কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ, তোলপাড় শুরু হয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়।

শিশু ওয়েংসুয়ানের বাবা তুও বলেন, দুর্ঘটনার পরে লকডাউনের কারণে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ছেলেকে আবাসিক ভবন থেকে বাইরে নিয়ে যেতে পারিনি। সাহায্যের জন্য আমরা ফোন করলে পুরো প্রক্রিয়াতেই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এবং কর্তব্যে অবহেলা ছিল।

নিহতের বাবা আরও জানান, তিনি তার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর পুলিশ তাদের বাড়িতে পৌঁছায়। কেউ কোনও সাহায্য করেনি। কোভিড চেকপয়েন্টে বাধা, কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, গাফিলতি- এসবের কারণেই আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, সোমবার দুপুর পোনে দুইটার দিকে তারা এই ঘটনায় ফোনকল পায়ে ১৩ মিনিট পরই পুলিশ দুইজনকে হাসপাতালে পাঠাতে সহায়তা করেছে। শিশুটি কার্বন মনোক্সাইড দূষণে মারা গেছে।

তবে পুলিশের বিবৃতিতে তীব্র হয় জনরোষ। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী লকডাউন ভেঙে নেমে আসে রাস্তায়।

বিক্ষুব্ধ এলাকাবসি বলছে, মহামারী-নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি।

২ নভেম্বর সন্ধ্যার মধ্যেই ওয়েংসুয়ানের মৃত্যু সংক্রান্ত পোস্ট চীনের স্যেশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম উইবোতে দেখেছে ৮০ কোটি মানুষ। একজন ব্যাবহারকারী লিখেছে, পুলিশ যদি যথেষ্ট দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েও থাকে, তবুও কি এটা তদন্ত করে দেখা উচিত না যে, কোনও পক্ষ এই শিশুটির বাবাকে সহায্য পেতে বাধা সৃষ্টি করেছিল কিনা?

বিবিসি-কে স্থানীয়দের পাঠানো ভিডিওতে দেখা গেছে, এলাকাটিতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে আছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজনকে লাথি মারতে মারতে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে কালো ইউনিফর্ম পরা একদল লোক।

যা ঘটেছিল

১ ভভেম্বর দুপুরে শিশুটির মা ঘরের হিটার চালু করে ও চুলায় পানি ফুটাতে দিয়ে গোসল করতে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরই শিশুর বাবা একটি বিকট শব্দ শোনেন। দৌড়ে ঘরে গিয়ে গ্যাসের ধোঁয়ার মধ্যে স্ত্রীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে হিটার ও চুলা বন্ধ করে প্রথমে স্ত্রীকে সামলানোর চেষ্টা করেন।

স্ত্রী একটু স্বাভাবিক হতেই ছেলে ওয়েংসুয়ানের কাছে দৌড়ে যান। দেখেন অচেতন অবস্থায় কেবল শ্বাস চলছে ছেলে ওয়েংসুয়ানের। তিনি তখন অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ ডাকতে কল করেন। নিহত ওয়েংসুয়ানের বাবার অভিযোগ, জরুরি নাম্বারে কল করা হলেও কেউই তৎপরতা দেখায়নি।

আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর শিশু ওয়েংসুয়ানের অবস্থার অবনতি দেখে বাবা কঠোর লকডাউনের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে কমিউনিটি কম্পাউন্ডে যান। তবে কমপাউন্ডের গেট পাহারাদার তাকে বাইরে যেতে না দিয়ে উল্টো স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো কিংবা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করতে বলে।

অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোনের পর ফোন করেও একঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ায় শিশুর বাবা আর অপেক্ষা না করে কোভিড চেকপয়েন্টের বেষ্টনি ভেঙেই ছেলেকে বাইরে নিয়ে যান। ঘটনা দেখে স্থানীয় কিছু লোকজন ট্যাক্সিও ডেকে দেয় তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সেখান থেকে ১০ মিনিটের ভেতর হাসপাতালে পৌঁছতে পারলেও শেষরক্ষা হয়নি ওয়েংসুয়ান। পথেই মৃত্যু হয় তিনবছরের এই শিশুর।

দুঃখ প্রকাশ প্রসাশনের

এদিকে জনরোষের তীব্রতায় বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অনলাইনে শিশুটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পরিবারকে সমবেদন জানিয়ে লিখেছে,

‘‘আমরা সংবাদ মাধ্যম এবং বিক্ষুব্ধদের সমালোচনা গ্রহণ করছি। ভবিষ্যতে এই ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব।’’

ওই বিবৃতিতে স্থানীয় প্রশাসন স্বীকার করেছে, অনুরোধ পাওয়ার ৯০ মিনিট পর অ্যাম্বুল্যান্স রওনা হয় হাসপাতাল থেকে। এর থেকে তাদের জরুরি পরিষেবার ঘাটতি সামনে এসেছে, তা-ও মেনে নিয়েছে প্রশাসন।

এ বিভাগের আরো খবর