দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হ্যালোইন উৎসবে পদদলিত হয়ে ১৫৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তৎপরতার ঘাটতি ছিল বলে দায় স্বীকার করেছে দেশটির পুলিশপ্রধান ইউন হি-কেউন।
সিউলের ইটাওয়ান এলাকায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ইউন জানান, পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তৎপরতা ছিল 'অপ্রতুল' ও হতাশাজনক। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অসীম দায়িত্ববোধের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তিনি। একই সঙ্গে পদদলিত হয়ে তিন শতাধিক মানুষের হতাহতের ঘটনায় পূর্ণ তদন্তের অঙ্গীকার করেছেন ইউন হি-কেউন। মঙ্গলবার এ খবর জানা গেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
দেশটিতে করোনার বিধিনিষেধ শিথিলের পর শনিবার রাতে হ্যালোইন উদযাপন কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো সিউলের নাইটলাইফ ড্রিস্ট্রিক্ট-এ বিশাল জনসমাগম ঘটেছিল দর্শনার্থীদের। বিশাল ঐ আয়োজনে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়ে। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও ১৫২ জন।
এই ঘটনায় পুলিশের তৎপরতার অভাব ছিল জানিয়ে দেশটির পুলিশপ্রধান ইউন বলেন, এই দুর্ঘটনার আগে পুলিশ অনেক কল পেয়েছিল, পরিস্থিতির ব্যাপকতা সম্পর্কে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। তবুও পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
স্থানীয় সময় রাত ১০টায় পদদলিত হওয়ার ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার আগেই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল পুলিশকে। সিউল পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে দক্ষিণ কোরিয়ার জরুরি সেবা নম্বরে সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে প্রথম কল এসেছিল এই ভিড়ের পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করতে এবং পরবর্তী সাড়ে তিন ঘণ্টায় এসেছিল আরও ১০টি কল।
দেশটির পুলিশ প্রধান জানান, জরুরি সেবার নাম্বারে কলগুলো পাওয়ার পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা এবং কর্মকর্তারা যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য 'দ্রুত এবং কঠোর নিবিড় তদন্ত' করবে পুলিশ।
ইউন হি-কেউন পুলিশের তৎপরতার অভাবের দায় স্বীকার করার আগ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ১৫৫ জন মানুষের মৃত্যুকে প্রাথমিকভাবে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছিল। যে ঘটনায় সহজে কাউকে দোষ দেয়া যায় না।
মঙ্গলবার দেশটির এক কংগ্রেসম্যান বলেছেন, ওই আয়োজনের কোনও প্রধান সংগঠক না থাকায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশকে কোনও বিশেষ অনুরোধ করা হয়নি। এদিকে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় এড়াতে ওই ঘটনার পর থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোভিড পরবর্তী পার্টিগুলোর চেয়ে এই বছরের হ্যালোইন উৎসবের জন্য আরও বেশি পুলিশ মোতায়েন ছিল।
স্থানীয় রেডিওতে দেশটির ক্ষমতাসীন পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা ইউ সাং-বাম বলেছেন, আইনত কাউকে এই ঘটনার দায় দেওয়া অসম্ভব, কারণ কেউ দায়ী ছিল না।
এদিকে মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইওল বলেছেন, ঘটনাটি ভিড় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব এবং এই বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গবেষণার অভাবের বিষয়টি সামনে তুলে এনেছে।
এ সময়, ভবিষ্যতে ভিড় ব্যবস্থাপনা করতে ড্রোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল সামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইওল।