ইরানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থান থেকে সরছে না দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি সহিংস আরচণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
বিক্ষোভের ৪৩তম দিনে রোববার তেহরানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে দেখা যায়, আধাসামরিক বাসিজ সদস্যরা এবং সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মীরা বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও টিয়ারগ্যাস ছুড়ছে।
Shocking footage: Paramilitary Basij members and plainclothes officers violently attack student protesters with sticks and teargas guns at Azad University in Tehran. Oct 30, 22.#MahsaAmini pic.twitter.com/6bdsIkWY1a
— IranWire (@IranWireEnglish) October 30, 2022ইরানওয়্যারকে পাঠানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিশেষ ইউনিটের এজেন্টরা সানন্দজ টেকনিক্যাল কলেজে অবরুদ্ধ ছাত্রদের ওপরও হামলা চালিয়েছে।
স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কাউন্সিলগুলো জানায়, বিক্ষোভকারীরা তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি অনুষদে আটকা পড়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, নিরাপত্তা বাহিনী যেকোনো মুহুর্তে তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে ভ্যানে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তেহরান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে উত্তেজনা বেশি ছিল। নিরাপত্তা বাহিনী ‘লিঙ্গ পৃথকীকরণের’ নিয়ম পালন করতে অস্বীকারকারী ছাত্রীদের ওপর জলকামান ব্যবহারের চেষ্টা করে।
একটি ছবিতে দেখা যায়, এক ছাত্রীকে পেটাতে যাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনীর এক সদস্য। আর কিছু ছাত্র ওই ছাত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
তেহরানের পাশাপাশি শিরাজ, কাজভিন, হামাদান, মাশহাদসহ ইরানের অন্যান্য শহরেও একই ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে জড়ো হওয়া ছাত্ররা ‘এখন শোকের না, ক্রোধের সময়’..., ‘আমরা শিশু হত্যাকারী সরকার চাই না’ বলে স্লোগান দিচ্ছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাহেদান শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২শিশুসহ অন্তত ৯২ জন নিহত হন। শিরাজ ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা রোববার ওই ঘটনার বিচার দাবি তোলেন। এ সময় তারা শহরের শিয়া মাজারে ২৬ অক্টোবরের ভয়াবহ বন্দুক হামলার প্রসঙ্গে স্লোগান দেয়।
১৬ সেপ্টেম্বর নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ তরুণ-তরুণীরা। ২০০৯ সালের প্রতিবাদ আন্দোলনের পর ইরানের শাসনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে চলমান বিক্ষোভ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গত ৪৩ দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্র্যাকডাউনে ২৯ শিশুসহ অন্তত ২৩৪ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
নিরাপত্তা বাহিনী আরও সহিংস হয়ে উঠবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি।