সেনাপ্রধান নিয়োগ ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ মিথ্যাচার করেছেন।
শাহবাজ শরিফের দাবি অনুযায়ী, পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগে ইমরান খান তার কাছে তিনটি নাম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তাকেও তিনটি নাম সুপারিশ করতে বলেছেন।
ইমরান ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সেনাপ্রধান নিয়োগের প্রস্তাব দেয়ার পর সেটি প্রত্যাখ্যান করার দাবিও করেছেন শাহবাজ।
তিনি বলেন, সেনাপ্রধানের মতো সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারই রয়েছে।
- আরও পড়ুন: হাজারো সমর্থক নিয়ে ইসলামাবাদের পথে ইমরান
শাহবাজের এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইমরান খান।
আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে পিটিআই প্রধান ইমরান লং মার্চ নিয়ে শুক্রবার লাহোর থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এই লং মার্চ ৪ নভেম্বর রাজধানীতে পৌঁছানোর কথা।
কর্মসূচির তৃতীয় দিনে পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহরে পৌঁছায় ইমরানের লং মার্চ। সেখানে বিশাল এক সমাবেশে তিনি জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
- আরও পড়ুন: ইমরানের লং মার্চ, ইসলামাবাদে রণসাজ
শাহবাজ শরিফকে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি কোনো ‘জুতা সাফকারীর’ সঙ্গে কথা বলেননি।
ইমরান বলেন, ‘আমি শুধু তাদের সঙ্গেই কথা বলি যাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শাহবাজ সবসময় তটস্থ থাকেন। তাই আমি কেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে বার্তা পাঠাতে যাব?’
ক্ষমতাসীন জোটের প্রতি ক্ষুব্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান জানান, তিনি কোনো সামরিক স্বৈরশাসকের ‘নার্সারিতে’ বেড়ে ওঠেননি।
ইমরান বলেন, ‘আমি আইয়ুব খানকে জেড এ ভুট্টোর মতো বাবা ডাকি না। আমি নওয়াজের মতো নই, যিনি জিয়াউল হকের হাঁটু মালিশ করে মন্ত্রিসভার অংশ হয়েছিলেন।
‘জেনারেল মোশাররফ যখন পিএমএল-এন এবং পিপিপিকে রাজনীতি থেকে ছুড়ে ফেলেছিলেন, জনতা তখন খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছিল।’
ইমরান আরও বলেন, ‘সাবেক সিওএএস এই চোরদের এনআরও দিয়ে দেশের শত্রুদের চেয়েও বেশি ক্ষতি করেছিলেন।’
পিটিআই প্রধান বলেন, ‘পাকিস্তানিদের সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার অধিকার রয়েছে। আমাদের মূর্খ ভাববেন না।
‘আমরা একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেখতে চাই। তাদের পাশে জনগণকে দেখতে চাই। কারণ আমরা গঠনমূলক সমালোচনায় বিশ্বাস করি।’
- আরও পড়ুন: ভোটের মাঠে জনপ্রিয় ইমরানের ভবিষ্যৎ কী
৭০ বছর বয়সী সাবেক তারকা ক্রিকেটার ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ ওঠে, এ সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় দখলে থাকা উপহার কেনা-বেচা করেছেন ইমরান। বলা হচ্ছে, লেনদেন করা এসব উপহারের মূল্য ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের বেশি।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ অক্টোবর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইমরান খানকে ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করে। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে বলেও জানায় কমিশন।
ওই রায়ের প্রতিবাদে ইমরানের সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন; যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জর্জরিত পাকিস্তানকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ২৫ অক্টোবর রাজধানীমুখী লং মার্চের ঘোষণা দেন ইমরান।
আইনসভায় অনাস্থা ভোটে এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় ইমরান খানকে। সেই থেকে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ করছেন ইমরান। তবে সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরের আগে নির্বাচন হবে না।
জন্মের পর থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে অঘোষিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের সমর্থন ছাড়া পাকিস্তানের মসনদে কোনো সরকার থিতু হতে পারে না। তিন তিনবার সরাসরি দেশ শাসন করেছে সেনারা। প্রভাবশালী এই বাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়।
এক সময় জেনারেলদের ঘনিষ্ঠ বিবেচিত হলেও, নিজের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে সামরিক বাহিনীর হাত আছে বলে অভিযোগ করে আসছেন ইমরান। তবে সামরিক বাহিনী বলছে, রাজনীতিতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই তাদের।