প্রায় দুই দশক ধরে বিনা বিচারে আটক থাকার পর মুক্তি দেয়া হয়েছে আমেরিকার পরিচালিত কিউবার গুয়ান্তানামো বে বন্দিশিবিরের একজন বয়স্ক বন্দিকে। তিনি একজন পাকিস্তানি নাগরিক।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শনিবার দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বন্দি থাকা সাইফুল্লাহ পারাচাকে শনিবার মুক্তি দেয়া হয়েছে।
পারাচার সঙ্গে ছাড়া পেয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী আরেক পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুল রব্বানি ও ৪১ বছর বয়সী ইয়েমেনের বাসিন্দা উসমান আবদুল আল-রহিম উসমান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আনন্দিত যে বিদেশে আটক একজন পাকিস্তানি নাগরিক অবশেষে তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।’
ব্যবসায়ী পারাচা সাইফুল্লাহকে ২০০৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীকে অর্থায়নে জড়িত।
আমেরিকার দাবি ছিল, পারাচার সঙ্গে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও খালিদ শেখ মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
২০০৮ সালে তার আইনজীবী স্বীকার করেন, ১৯৯৯ সালে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তিনি দেখা করেছিলেন টেলিভিশন চ্যানেলের একটি প্রোগ্রামের জন্য।
আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত থাকা ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে বরাবরই অস্বীকার করেছিলেন পারাচা, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণ করাও সম্ভব হয়নি। বরঞ্চ আমেরিকার প্রতি তার ভালোবাসা রয়েছে বলে তিনি দাবি করে আসছিলেন।
গত বছরই জো বাইডেন তার মুক্তির অনুমোদন দিয়েছিলেন।
চলতি বছর মে মাসে আমেরিকা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, পারাচা তাদের জন্য আর কোনো হুমকি নয়।
গুয়ানতানামোর বেশিরভাগ বন্দির মতোই পারাচার বয়স ৭৪ বা ৭৫ বছর। আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে কখনোই অভিযোগ আনা হয়নি, অথচ নিজের আটকাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো পূর্ণ আইনি সক্ষমতাও তার ছিল না।
২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক অর্নিদিষ্টকালের যুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় আল-কায়েদার সন্দেহভাজন সদস্যদের আটক রাখার জন্য কিউবার গুয়ান্তানামো বেতে কারাগার স্থাপন করা হয়।
গুয়ান্তানামোতে আটক ছিলেন ৭৮০ জন বন্দি। এর মধ্যে ৭৩২ জনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা ছাড়াই তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়া প্রত্যেকেই এই বন্দি শিবিরে এক দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছে।
এই বন্দিশিবিরে এখনও আটক রয়েছেন ৪০ জন মানুষ। আমেরিকা বলছে, বাকি যারা বন্দি আছেন, তাদের অনেকেই ৯/১১ হামলা ও অন্যান্য আমেরিকার লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।