জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইউক্রেনের শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, কৃষ্ণ সাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার পর তা থেকে সরে এসেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়া উপদ্বীপের অন্যতম বড় শহর সেভাস্তোপোলের বন্দরে স্থানীয় সময় শনিবার হামলার পর এ ঘোষণা দেয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যে ঘোষণা দিয়েছে তা অনুমানই করা যাচ্ছিল।
হামলা নিয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। এরপরও এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের সেনাদের দায় রয়েছে বলে দাবি তুলেছে তারা। অবশ্য গত মাসে সাগরের তলদেশে গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ নিয়েও রাশিয়া একই দাবি করেছিল।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওই হামলার পর প্রথমে জানায়, শস্য চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে শনিবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে একটি জাহাজের সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর একটি বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে শুকনা পণ্যবাহী জাহাজের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না এবং এই সাগর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল নিয়ে হওয়া চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে ইউক্রেনের বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয় রুশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়ে অনেক দেশ।
তবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সবমিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য পাঠানোর কথা ইউক্রেন থেকে।
ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণ সাগরে অবরোধ শিথিল করে রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্যশস্য রপ্তানির পথে বাধা দূর হয়। প্রাথমিকভাবে চার মাসের জন্য চুক্তি হয়। নভেম্বরের শেষে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। চুক্তির মেয়াদ আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে এখন এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।