বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাহসার মৃত্যুর ৪০তম দিনে ফের উত্তাল ইরান

  •    
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:০১

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএসএনএ বলছে, কবরস্থানে শোকার্ত এবং পুলিশের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। যদিও শোকার্তদের বেশির ভাগ কুর্দি স্লোগান দিচ্ছিল। পরে অনেকে সংঘর্ষের উদ্দেশ্যে শহরের দিকে চলে যায়। তাদের কারও কারও হাতে ছিল কুর্দি পতাকা।

কদিন কিছুটা শান্ত থাকার পর আবারও বিক্ষোভে উত্তাল ইরান। দেশজুড়ে বুধবার তীব্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা আইএসএনএ বলছে, পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ৪০ দিন ঘিরে হাজার হাজার লোক কুর্দিস্তান প্রদেশের সাক্কেজে তার কবরে যান। তারপরই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

মৃত্যুর ৪০তম দিনটি ইরানি ও ইসলামি ঐতিহ্যে শোকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় ২২ বছরের মাহসার। হিজাব ঠিকমতো না করার অভিযোগে সেদিন ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।

নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাহসা আমিনির মৃত্যু হয়

প্রত্যক্ষদর্শী ও মাহসার পরিবারের দাবি, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাকে মারধর করেছে। এতেই তার মৃত্যু হয়। তবে পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ভোগা শারীরিক অসুস্থতাই মাহসার মৃত্যুর কারণ।

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সিরাজে বুধবার শিয়াদের একটি মাজারে বন্দুক হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হওয়ার দিনেই নতুন অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে উগ্রবাদী সংগঠন আইএস। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আইএসের এক সদস্য মেশিনগান নিয়ে মাজারের ‘সুন্নি মতাবলম্বী অস্বীকারকারী কাফেরদের ওপর হামলা চালিয়েছে’।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএসএনএ বলছে, সাক্কেজে আমিনির কবরের কাছে যেতে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়নি নিরাপত্তা বাহিনী। কবর জিয়ারত শেষে সংঘর্ষ শুরু হয়।

আইএসএনএ জানায়, কবরস্থানে শোকার্ত এবং পুলিশের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। যদিও শোকার্তদের বেশির ভাগ কুর্দি স্লোগান দিচ্ছিল। পরে অনেকে সংঘর্ষের উদ্দেশ্যে শহরের দিকে চলে গেছে। তাদের কারও কারও হাতে ছিল কুর্দি পতাকা।

বিশাল গাড়িবহর নিয়ে হাজার হাজার মানুষ মাহসার কবরে যাচ্ছেন

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিশাল গাড়িবহর নিয়ে হাজার হাজার লোক মাহসার কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’... ‘এই শিশু-হত্যাকারী শাসনের অবসান চাই’ স্লোগানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে গোটা এলাকায়।

অন্য একটি ডিভিওতে দেখা যায়, রাস্তায় আগুন থেকে ধোঁয়া উঠছে, বিক্ষোভকারীরা এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করছেন, পেছন থেকে গুলির শব্দ আসছে।

নরওয়েভিত্তিক কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও-এর শেয়ার করা একটি ভিডিও যাচাই করেছে সিএনএন। সেখানে দেখা যায়, মাহসার মৃত্যুর ৪০তম ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেয়ার পর, মঙ্গলবার গভীর রাতে সাক্কেজে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।

ইন্টারনেট ওয়াচডগ নেটব্লকস টুইটারে জানায়, বুধবার সকাল থেকে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশ এবং সানন্দাজে ইন্টারনেটে সেবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইএসএনএ বলছে, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা বিবেচনায় সাক্কেজ শহরে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

ইরানে এমন আইন নেই যার মাধ্যমে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার। তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয় থাকলে, সবকিছুই করতে পারে সরকার।

ইরান সরকার আগেও নিরাপত্তার খাতিরে বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজনে হস্তক্ষেপ করেছে, কখনও কখনও বন্ধ করেও দিয়েছে।

আইআরএনএ বলছে, আমিনির পরিবার বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা মাহসার মৃত্যুর ৪০তম দিন ঘিরে কোনো আয়োজন করবে না।

কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর চাপের মুখে এই বিবৃতি দিয়েছে মাহসার পরিবার। কারণ নিরাপত্তা বাহিনী মাহসার পরিবারকে হুমকি দিয়েছিল, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে জেলে ঢোকানো হবে মাহসার ভাই কিয়ারশ আমিনিকে। মাহসাকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন সঙ্গে ছিল কিয়ারশ। ওই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী তিনি।

বিক্ষোভ চলছেই

তেহরানে বুধবার বিশাল বিক্ষোভ হয়। তবে নিরাপত্তা বাহিনী আমিনির মৃত্যুর শোক প্রকাশকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ময়লার ড্রাম পোড়াচ্ছে, ঢিল ছুড়ছে। জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালাতে দেখা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া অন্য একটিতে দেখা যায়, তেহরানে চিকিৎসকের একটি দল ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা!’ স্লোগান দিচ্ছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, এই দলটির দিকে টিয়ার গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) দাঙ্গাবিরোধী ইউনিটগুলো তেহরানের রাস্তায় তৎপর হতেও দেখা গেছে কিছু ভিডিওতে।

এক ভিডিও ধারণকারীর মতে, আইআরজিসির মতো একটি ইউনিট তেহরানে চিকিৎসকদের দলটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। তবে কী ধরনের গুলি ছোড়া হয়েছে, ভিডিওটিতে তা স্পষ্ট না।

মাহসার মৃত্যুর ৪০ দিন ঘিরে ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার বিক্ষোভ হয়েছে। মাশহাদের ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয়, কারাজের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়, তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গবেষণা শাখা এবং কেরমানের আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবল বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

আইআরএনএ বলছে, তেহরানের শরিফ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বুধবার জানিয়েছে যে ‘অনুকূল পরিবেশের’ অভাবের পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস ভার্চ্যুয়ালি নেয়া হবে।

ইরানে নতুন নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

বিক্ষোভে সহিংসতা বাড়তে থাকায়, ইরানি বাহিনীর তীব্র সমালোচনা করছেন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্র বুধবার চলমান ক্র্যাকডাউনে জড়িত ইরানি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের গোয়েন্দা সংস্থার কমান্ডার এবং আইআরজিসি-এর অপারেশনের ডেপুটি কমান্ডার। আছেন, সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের দুই কর্মকর্তা। এই দুই অঞ্চলে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে।

উদ্বেগ জানিয়ে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, জনগণের প্রতিবাদ কীভাবে দমন করা যায় সে বিষয়ে ইরানকে পরামর্শ দিতে পারে রাশিয়া।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের বুধবারের বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। মস্কো কঠোর অবস্থান নিতে তেহরানকে পরামর্শ দিতে পারে। কারণ তাদের এই অভিজ্ঞতা আছে।

‘ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে যে ইরান সহায়তা করছে, তা স্পষ্ট এবং সর্বজনীন। বিশ্ব থেকে একঘরে হয়ে ইরান ও রাশিয়া ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। ইরানের প্রতি আমাদের বার্তা খুবই স্পষ্ট... নিজের লোকদের হত্যা বন্ধ করুন... ইউক্রেনীয়দের মারতে রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করুন।’

বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনীর আরচণের একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, বিপুল বিক্ষোভকারীকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও বাদ পড়েননি।

এ বিভাগের আরো খবর