প্রথম হিন্দু ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
জিও নিউজ বলছে, ৪২ বছর বয়সী ঋষি ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে একটি হিন্দু-পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার দাদা-দাদি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই বেড়ে উঠেছেন।
তবে অদ্ভূত উপায়ে ঐতিহ্যগতভাবে ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশেরই ঋষি। তিনি একজন হিন্দু অনুশীলনকারী; গীতার ওপর হাত রেখে কমন্সে শপথ নিয়েছেন।
ঋষির দাদা রামদাস সুনাক চাকরিসূত্রে গুজরানওয়ালা ছেড়ে ১৯৩৫ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে চলে যান। এর পর রামদাসের স্ত্রী সুহাগ রানী সুনাক তার শাশুড়ির সঙ্গে গুজরানওয়ালা থেকে দিল্লিতে চলে যান। দুই বছর দিল্লিতে কাটানোর পর ১৯৩৭ সালে স্বামীর কাছে কেনিয়ায় ফেরেন তিনি।
রামদাস ও সুহাগ দম্পতির ৬ সন্তান; ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে। ঋষির বাবা যশবীর সুনাক ১৯৪৯ সালে নাইরোবিতে জন্মগ্রহণ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে লেখাপড়ার জন্য ১৯৬৬ সালে তিনি লিভারপুলে চলে আসেন। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুলে। লিসেস্টারে ১৯৭৭ সালে উষাকে বিয়ে করেন যশবীর।
- আরও পড়ুন: গীতায় হাত রেখেই শপথ নেবেন ঋষি
তিন বছর পর ১৯৮০ সালে সাউদাম্পটনে ঋষি জন্মগ্রহণ করেন। অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত তার বাবা-মা সফলভাবে ফার্মেসি ব্যবসা চালিয়ে গেছেন।
এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘গুজরানওয়ালার একটি পাঞ্জাবি খত্রী পরিবার থেকে সুনাকরা এসেছে। ঋষির দাদা রামদাস সুনাক ১৯৩৫ সালে নাইরোবিতে কেরানি পদে কাজ করার জন্য গুজরানওয়ালা ছেড়ে চলে যান।’
ঋষি যে পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে পাকিস্তানি নেটিজেনরা ঋষিকে নিজেদের দাবি করে আসছে।
টুইটে একজন লিখেছেন, ‘আমি মনে করি পাকিস্তানেরও ঋষি সুনাকের ওপর দাবি করা উচিত। কারণ তার দাদা গুজরানওয়ালার বাসিন্দা। তারা সেখান থেকে কেনিয়া এবং তারপর ব্রিটেনে চলে যান।’
অন্য একজন লেখেন, ‘বাহ! কী অসাধারণ অর্জন। একজন পাকিস্তানি এখন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ পদে আরোহণ করেছেন। আত্মবিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব।’
অনেকেই আবার লিখেছেন, ঋষির এই অর্জন ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের জন্যই আনন্দের ঘটনা।
একজন লেখেন, ‘গুজরানওয়ালার এক পাঞ্জাবি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এই আশা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুমাতে যাচ্ছি! এই মুহূর্তে পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশেরই যৌথভাবে গর্ব করা উচিত!’
অন্য একজন লেখেন, ‘যেহেতু গুজরানওয়ালা পাকিস্তানের অংশে পড়েছে, তাই ১০০ বছর আগেও যিনি বা যারা এই শহরের বাসিন্দা ছিলেন, তারা আজও পাকিস্তানি।’
- আরও পড়ুন: ঋষিকে নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে উচ্ছ্বাস
লোভনীয় খাবার ও কুস্তির সংস্কৃতির জন্য গুজরানওয়ালা পরিচিত। সড়ক পথে লাহোর থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালালে এই শহরে পৌঁছানো যায়।
জিও নিউজ বলছে, দেশভাগের আগে যখন ঋষির দাদা-দাদিরা গুজরানওয়ালায় থাকতেন, তখন শহরটি অন্তত সাতটি গেট দ্বারা বেষ্টিত ছিল। এগুলো প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
তবে আজকের গুজরানওয়ালা একটি যানজট ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর। দেশভাগের আগে এই শহরে সমৃদ্ধশালী একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল।
গুজরানওয়ালা একটি যানজট ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরযখন ব্রিটিশ ভারতে (আজকের ভারত ও পাকিস্তান) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়, তখন অনেক হিন্দু, শিখ এবং মুসলমান দেশান্তরিত এবং স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হন। অনেক মুসলিম ও হিন্দু পরিবার আজকের ভারত ও পাকিস্তান ছেড়ে কেনিয়া এবং অন্যান্য দেশে চলে যায়।
ব্রিটেনে এশিয়ান এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঋষির উত্থানে ভীষণ আশাবাদী। এ ঘটনাকে তারা নতুন যুগের ভোর উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রিটিশ ফিউচারের পরিচালক সুন্দর কাটওয়ালা বলেন, ‘ঋষির প্রথম ব্রিটিশ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হওয়া একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এক বা দুই দশক আগেও এটা সম্ভব হতো না। ঋষির প্রধানমন্ত্রী পদে আসা এটাই প্রমাণ করে যে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ পদটি সব ধর্ম ও জাতিগত পটভূমির মানুষের জন্য উন্মুক্ত।’
ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড-সমর্থিত ব্রিটিশ ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য ১৯২৮ ইনস্টিটিউট বলছে, একজন ব্রিটিশ ভারতীয়কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা অবিশ্বাস্য। আমাদের দাদা-দাদিদের অনেকেই ব্রিটিশদের প্রজা ছিলেন। যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ অফিসে ভারতীয় ঐতিহ্যের কাউকে দেখা সত্যিই দারুন।