জলবায়ু বিপর্যয়ে প্রায়ই সভা-সমাবেশে সরব হতে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের। তবে আজ পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি তারা। আর এ কারণে পরিবেশবাদীদের আন্দোলন-প্রতিবাদ-বিক্ষোভগুলো আলোর মুখ দেখে না।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন? যে গতিতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে নিকটভবিষ্যতে গ্রহটি মানুষের বাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এই বিপর্যয়ে বিশ্বনেতৃত্বের টনক না নড়ায়, বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন পরিবেশকর্মীরা। বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে প্রতিবাদের ধরন বদলিয়েছেন তারা।
জার্মানির পটসডাম শহরের বারবেরিনি জাদুঘরটি অন্য সব দিনের মতো রোববারও খোলা ছিল দর্শনার্থীদের জন্য। সেদিন এখানে ঘুরতে আসে পরিবেশবাদীদের একটি দল। একপর্যায়ে দলটি ফরাসি চিত্রশিল্পী ক্লদ মনে’র আঁকা একটি শিল্পকর্মে আলুভর্তা মাখিয়ে দেয়।
কদিন আগে লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের বিখ্যাত সানফ্লাওয়ারস ছবিতে টমেটো সস ঢেলে দিয়েছিল ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’ নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। রোববার পটসডামের জাদুঘরে কাণ্ডটি ঘটান ‘লেটজেট জেনারেশন’ (শেষ প্রজন্ম) নামের সংগঠনের দুই সদস্য। তারা হাতে সেদ্ধ আলু পিষে মনে’র লেস মিউলেস (খড়ের স্তূপ) ছবিতে মাখিয়ে দেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের মোকাবিলায় সবাইকে জেগে উঠতে হবে। এ লক্ষ্যেই স্টান্টটি ডিজাইন করা হয়েছে। রোববারের ঘটনাটি ভিডিও করে টুইটারে আপলোড করেছে লেজটে জেনারেশন। সেখানে তাদের এক সদস্যকে বলতে শোনা যায়- ‘মানুষ ক্ষুধার্ত, মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে’।
Wir machen diesen #Monet zur Bühne und die Öffentlichkeit zum Publikum.Wenn es ein Gemälde braucht – mit #Kartoffelbrei beworfen – , damit die Gesellschaft sich wieder erinnert, dass der fossile Kurs uns alle umbringt:Dann geben wir euch #Kartoffelbrei auf einem Gemälde! https://t.co/TN1dFKsi94
— Letzte Generation (@AufstandLastGen) October 23, 2022অন্য একজন বলেন, ‘আমরা জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। আর আপনারা ভয় পাচ্ছেন পেইন্টিংয়ে টমেটো স্যুপ ঢালা বা ম্যাশড আলু মাখানো নিয়ে। আপনারা জানেন আমি কি নিয়ে ভয় পাচ্ছি? আমি ভয় পাচ্ছি কারণ বিজ্ঞান আমাদের বলছে ২০৫০ সালে আমরা আমাদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারব না।
‘এই বিষয়টি আপনাদের বোঝানোর জন্য পেইন্টিংয়ে আলুভর্তা মাখাতে হয় কেন? মনে রাখবেন, খাবার নিয়ে যুদ্ধ বাধলে এই পেইন্টিংয়ের কোনো মূল্য থাকবে না। আপনারা আসলে কবে বুঝতে পারবেন? জলবায়ু নিয়ে ব্যবসা কবে বন্ধ করবেন?
সংগঠনটি বলছে, তারা ‘মনে’কে মঞ্চ এবং জনসাধারণকে দর্শক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তারা বার্তাটি অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
‘যদি সমাজকে সতর্ক করার জন্য আলুভর্তা বা টমেটোর স্যুপ দিয়ে একটি পেইন্টিং করা লাগে তবে তাই করব।’
জাদুঘরের এক মুখপাত্র বলেছেন, পেইন্টিংটি কাচের একটি বাক্সে ছিল। এ কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
‘পুলিশ দ্রুত পৌঁছায়। তারা আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সরে যায়।’
জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নীরব অবস্থানের প্রতিবাদে গত বছর বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছিল লেটজেট জেনারেশন। বার্লিনের রাইখস্টাগ বিল্ডিংয়ের সামনে অনশন করেছিলেন সংগঠনের সদস্যরা। চলতি বছরের শুরুতে জার্মানির কয়েকটি ব্যস্ত সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেছিলেন তারা।
সংগঠনটি জলবায়ু বিপর্যয় রোধে জার্মান সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে আসছে। তাদের অভিযোগ, দেশকে অতলগহ্বরের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আর্ট গ্যালারিগুলোতে সম্প্রতি প্রতিবাদের স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছেন পরিবেশবাদীরা।
জুলাইয়ে আল্টিমা জেনারেজিওন নামে ইতালীয় একটি সংগঠনের দুই সদস্য ফ্লোরেন্সের উফিজি গ্যালারিতে এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন। তারা স্যান্ড্রো বোটিসেলির প্রিমাভেরা শিল্পকর্মটি যে কাচের বাক্সে রাখা, আঠা লাগিয়ে নিজেদের আঙুল সেটিতে সেপ্টে দেয়। তারপর অন্য হাতে একটি ব্যানার ধরে রাখে; যাতে লেখা- ‘শেষ প্রজন্ম, গ্যাস নেই, কার্বন নেই’।
১৫ দিন আগে লন্ডনের রয়্যাল একাডেমিতে আরেক ঘটনা ঘটান জাস্ট স্টপ ওয়েলের কর্মীরা। এদিন ৫০০ বছরের পুরোনো দ্য লাস্ট সাপারের চিত্রকর্মের কাচে নিজেদের হাত সেপ্টে প্রতিবাদ জানান তারা।