যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্ব প্রশ্নে ভোট থেকে শেষ প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মর্ডান্ট সরে দাঁড়ানোয় বিনা ভোটেই টোরিদের নেতা হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। এর আগে এই দৌড় থেকে নাম প্রত্যাহার করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন লিজ ট্রাস। প্রধানমন্ত্রী পদে কেবল ৪৫ দিন দায়িত্ব পালন করেন ট্রাস।
ট্রাস বলেছিলেন, ‘যে ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছি, আমি তা পূরণ করতে পারিনি। তাই মহামহিম রাজার সঙ্গে কথা বলেছি; তাকে অবহিত করেছি যে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে পদত্যাগ করছি আমি।’
পেনি মর্ডান্ট
লিজ ট্রাসের সমর্থন নিয়ে হাউস অফ কমন্সের নেতা এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন মর্ডান্ট।
- আরও পড়ুন: ৪৫ দিনেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর বিবৃতিতে পেনি মর্ডান্ট বলেন, ‘আমাদের দলই আমাদের সদস্যপদ...আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধি, কর্মী, তহবিল সংগ্রহকারী বা সমর্থক যাই হোক না কেন।
‘নেতৃত্বে প্রতিযোগীর সুযোগ থাকলেও সহকর্মীরা মনে করছেন আমাদের এখন স্থিতিশীল হওয়া দরকার। দেশের ভালোর জন্য সরল বিশ্বাসে দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘যাই হোক আমরা আমাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিয়েছি। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ঋষির প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
‘আমরা সবাই এক দেশ। আমরা সবাই একে অপরের। ঋষির সঙ্গে মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাব। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে।’
এর আগে বরিস জনসন জানান, তিনি টোরি নেতৃত্বের লড়াইয়ে অংশ নেবেন না।
তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্টে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলে, সরকার চালাতে বেগ পেতে হয়। এ কারণেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করছি। ভোটে যে-ই জিতুক, তার প্রতি আমার সমর্থন থাকবে।’
বরিস জনসন
কে এই ঋষি সুনাক
সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালের ১২ মে পূর্ব ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে। কেনিয়ান বাবা এবং তানজেনিয়ান মায়ের কাছে বেড়ে ওঠেন তিনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সুনাক। তার দাদা-দাদি ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০-এর দশকে সন্তানদের নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তারা।
চলতি গ্রীষ্মের শুরুতে বরিস জনসনকে নেতার পদ থেকে প্রতিস্থাপনের দৌড়ে ছিলেন ঋষি সুনাক। রক্ষণশীল এমপিদের সর্বাধিক সমর্থন জিতে লিজ ট্রাসের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রচারে তিনি সতর্ক করেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর (ট্রাসের) কর পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে। তবে তার বার্তা পার্টির সদস্যদের কাছে অতটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। তিনি ২১ হাজার ভোটে হেরে যান।
সুনাক একবারই রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার নির্বাচনি এলাকা থেকে ২০১৫ সালে এমপি হয়েছিলেন। ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে খুব কম মানুষই তাকে সমর্থন করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজকোষের চ্যান্সেলর হয়েছিলেন তিনি।
লকডাউন চলাকালীন অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল সুনাককে।
স্ত্রীর কর-বিষয়ক বিতর্কের কারণে খ্যাতি ক্ষুণ্ন হয় সুনাকের। এর কিছু দিন পর লকডাউন নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুনতে হয়েছিল তাকে।