বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটের মাঠে জনপ্রিয় ইমরানের ভবিষ্যৎ কী

  •    
  • ২১ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:০৮

ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে ইমরান দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবিতে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে নিজের জনভিত্তির প্রমাণ দিচ্ছিলেন। কেবল পাঁচদিন আগে জাতীয় পরিষদের আটটি আসনের উপনির্বাচনের ছয়টিতে জিতে ইমরান দেখিয়েছিলেন জনগণ তার পক্ষেই আছে। তবে এই সুখ বেশিদিন টিকল না।

প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর প্রাদেশিক সরকারের উপনির্বাচনে ভূমিধস জয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হওয়া ইমরান খানের এই পরিণতি কেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা।

নির্বাচন কমিশন তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় উপহার বেআইনিভাবে বিক্রি করে দেয়ার কথা উল্লেখ করেছে। পাকিস্তানের রাজনীতির অতীতের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে নেপথ্যে অন্য কিছু আছে কি না, এই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

তথ্য ভুল দেয়ায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতাকে পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। ফলে আগামী বছরে হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারছেন না।

দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের কমিশন ইসলামাবাদ কার্যালয়ে শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করে। রায়ে একই সঙ্গে জানানো হয়, ভুল তথ্য দেয়ার জন্য ইমরানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে।

হঠাৎ ক্ষমতাচ্যুতির পর তেজ দেখাচ্ছিলেন ইমরান

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চমক দেখিয়ে ক্ষমতায় আসা ইমরান খান যখন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক সে সময় তার পতন ছিল বড় চমক।

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে সাবেক এই ক্রিকেটার অভিযোগ তোলেন, আমেরিকার মদতে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে তিনি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবিতে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে নিজের জনভিত্তির প্রমাণ দিচ্ছিলেন।

কেবল পাঁচ দিন আগে জাতীয় পরিষদের আটটি আসনের উপনির্বাচনের ছয়টিতে জিতে ইমরান দেখিয়েছিলেন জনগণ তার পক্ষেই আছে। তবে এই সুখ বেশিদিন টিকল না।

অভিযোগের যে জবাব দিয়েছিলেন ইমরান

ক্ষমতা ছাড়ার চার মাসের মাথায় জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ তোশাখানা মামলার আলোকে ইমরান খানের অযোগ্যতা চেয়ে চলতি বছরের আগস্টে নির্বাচন কমিশনে রেফারেন্স পাঠান। এতে দাবি করা হয়, ইমরান খান তোশাখানা থেকে নেয়া উপহারের বিবরণ এবং এই উপহার বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের তথ্য প্রকাশ করেননি।

৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জবাব দেন ইমরান খান। তিনি স্বীকার করেন, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অন্তত চারটি উপহার তিনি বিক্রি করেছিলেন। তবে সে ক্ষেত্রে তিনি কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ২ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার রুপিতে যে উপহারগুলো সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলো ৫ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে তিনি বিক্রি করেছেন। এসব উপহারের একটিতে আছে হীরাখচিত হাতঘড়ি, এক জোড়া কাফ লিঙ্ক, একটি দামি কলম এবং একটি আংটি। বাকি তিনটি উপহারের মধ্যে আছে চারটি রোলেক্স ঘড়ি।

২০১৮ সালের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত ইমরান খান ৩১টি উপহার পেয়েছিলেন, যেগুলোর মধ্যে নিয়ম মেনে চারটির দাম পরিশোধ করেছিলেন তিনি। নিয়মটি হলো- উপহারের দাম ৩০ হাজার রুপির কম হলে, সেগুলোর জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হয় না।

২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ইমরান ৯টি উপহার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে তিনটির জন্য ১০ লাখ ৭১ হাজার রুপি দিয়েছেন।

ইমরান দাবি করেন, এসব উপহার তিনি কয়েকজনকে দিয়ে দিয়েছেন; যাদের নাম প্রকাশ করেননি পিটিআই প্রধান। এসব উপহারের মধ্যে স্বর্ণ ও হীরা দিয়ে তৈরি লকেট, এক জোড়া কানের দুল (সোনা এবং হীরা) এবং হীরার একটি আংটি। এই গহনা কেনার জন্য তিনি ৫ লাখ ৪৪ হাজার রুপি জমা করেছিলেন।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ইমরান ১২টি উপহার পেয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটির জন্য তিনি ১ কোটি ২৯ লাখ রুপি দিয়েছেন। ২০২১ সালের জুলাই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি উপহার পান; এর মধ্যে দুটির জন্য ৩১ লাখ রুপি দেন তিনি।

ইমরান আরও জানান, তার মেয়াদে বিভিন্ন কর্মকর্তারা ৩২৯টি উপহার পেয়েছেন; যার মধ্যে ফুলদানি, আর্ট পিস, লকেট এবং ডেকোরেটিভ আইটেমসহ ৫৮টি উপহার তাকে এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উপহার দেয়া হয়েছিল। এসব উপহারের মধ্যে কেবল ১৪টি আইটেম ছিল ৩০ হাজার রুপির বেশি মূল্যের, নিয়মিত পদ্ধতি অনুসারণ করে এগুলো মূল্য তিনি পরিশোধ করেছিলেন।

শুনানিতে যেসব আর্জি নাকচ

জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ তোশাখানা মামলার আলোকে ইমরান খানের অযোগ্যতা চেয়ে ইসিপিতে যে রেফারেন্স পাঠিয়েছিলেন, তার জবাবে ইমরান খানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মোবাইল, ঘড়ি, জুতা এবং এ জাতীয় অন্যান্য জিনিস কমিশনের কাছে আজ পর্যন্ত সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেননি জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্য।

যে চারটি উপহার ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে বিক্রি হয়েছিল, সেগুলো অভিযুক্তের কাছে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পৌঁছেনি। অতএব, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের করা সম্পদের বিবরণীতে সেগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিক্রয়ের পরিমাণ (এ) ব্যাংক আল-ফালাহ অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল এবং সেই পরিমাণ যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

আবার, ২ কোটি ১২ লাখ ২৬ হাজার রুপির উপহারের মূল্য ইমরান জমা দিয়েছেন; ২০১৯ সালের আয়কর রিটার্নে যা উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যারিস্টার আলী জাফর আদালতে পিটিআই প্রধানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। মামলাটিকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে তিনি ইমরানের বিরুদ্ধে রেফারেন্স বাতিলের জন্য পাঁচ সদস্যের ইসিপি বেঞ্চকে অনুরোধ করেছিলেন।

জাফর আলী বলেছিলেন, ‘বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলাটি হয়েছে। এখানে ক্ষমতা ও সংবিধানের অপব্যাবহার হয়েছে।’

ইমরানের আইনজীবীর দাবি ছিল, রেফারেন্সটি এত গুরুত্ব পাওয়ার উপযুক্ত ছিল না। অতএব, মামলাটি খারিজ করে দেয়া উচিত।

এ বিভাগের আরো খবর