জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্থিনিরা।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, ‘(ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি ইস্যুতে) অস্ট্রেলিয়া একটি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেখানে ইসরায়েল ও একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সহাবস্থান করবে, শান্তি ও নিরাপত্তায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে।’
অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে পূর্ববর্তি রক্ষণশীল সরকারের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি থেকে সরে এসেছে।
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ বলেছেন, এই সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ইসরায়েলকে একটি বার্তা পাঠিয়েছে যে বিশ্ব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করাকে মেনে নেয় না।
শতায়েহ জ্ঞানী ও সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের প্রশংসা করে বলেন, সত্য, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকারের মূল্যবোধের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার সম্মান একাত্মতা প্রমাণ হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, অস্ট্রেলিয়া ৪ জুন ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ওপর ভিত্তি করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে। যেখানে ফিলিস্তিনির রাজধানী ছিল জেরুজালেম।
প্যালেস্টাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা আহমেদ আল-দেক আরব নিউজকে বলেছেন যে অস্ট্রেলিয়ার আগের সরকার একটি ঐতিহাসিক ভুল করেছিল।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা জেরুজালেম নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি কূটনৈতিক-রাজনৈতিক যুদ্ধে আছি, কারণ জেরুজালেম এই অঞ্চলে শান্তির চাবিকাঠি এবং জেরুজালেম ছাড়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র নেই।’
আহমেদ আল-দেক আরও বলেন, ইসরায়েল জেরুজালেমে তাদের দূতাবাস স্থানান্তর করতে এবং এটিকে ইসরায়েলের একীভূত রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেশগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি অস্ট্রেলিয়ার পদক্ষেপ সেই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি প্রচেষ্টার অবসান ঘটাবে।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা হুসেইন আল-শেখ টুইট বার্তায় বলেন,'আমরা জেরুজালেমের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক বৈধতার অধীনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বানকে মূল্য দিই। পিএলওর সেই সিনিয়র কর্মকর্তার দাবি, জেরুজালেমের সার্বভৌমত্বের ভবিষ্যৎ স্থায়ী সমাধানের ও নির্ভর করে। এর ভিত্তি হবে আন্তর্জাতিক বৈধতার ওপর, যা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।
হামাসের কর্মকর্তা বাসিম নাইম বলেছেন যে তার দল এই সিদ্ধান্তকে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সঠিক পথে একটি পদক্ষেপ বলে মনে করেছে
অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে ইসরায়েল সরকার।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বলেছেন : 'জেরুজালেম ইসরায়েলের চিরন্তন ও ঐক্যবদ্ধ রাজধানী, এবং কিছুই কখনও পরিবর্তন হবে না।'
১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমকে দখল করে। পরে পুরো জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে।
২০১৭ সালে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়ে ৭ দশকের আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন ঘটান। পরের বছর আমেরিকা তার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করে। অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ তখন ট্রাম্পের নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিল।