চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও কয়েক সপ্তাহের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলের জেরে প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব গ্রহণের ৪৪ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
বৃহস্পতিবার ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে বক্তৃতাকালে ট্রাস জানিয়েছেন, কনজারভেটিভ পার্টির ‘১৯২২’ কমিটির নেতা গ্রাহাম ব্র্যাডির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি রাজা চার্লসের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
একই সঙ্গে বক্তৃতায় তিনি জানিয়েছেন, তার উত্তরসূরি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
লিস ট্রাস
আগামী সপ্তাহেই ট্রাসের উত্তরসূরি নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হবে। এখন পর্যন্ত কেউই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেয়নি। তবে বিবিসি বেশ কয়েকজনের সম্ভাবনার কথা বলছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য যাদের সম্ভাবনার কথা ভাবা হচ্ছে বিবিসির প্রতিবেদনের আলোকে তাদের পরিচিতি নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ঋষি সুনাক
ঋষি সুনাক
যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং এই বছরের কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে ট্রাসের প্রধান প্রতিপক্ষ ঋষি সুনাক পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে দেশটি প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী পাবে।
এর আগে ট্রাসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টোরি সদস্যদের ভোটে চূড়ান্ত রাউন্ডে ট্রাসের কাছে হারলেও দলীয় এমপিদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শীর্ষ পছন্দ।
ঋষি সুনাকের পদত্যাগের কারণেই চাপে পড়েন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এরপরই সুনাকের পথে অন্য মন্ত্রীরা হাঁটা শুরু করলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন বরিস জনসন। পরে তিনি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
পেনি মর্ডান্ট
পেনি মর্ডান্ট
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট জনসনের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ট্রাস ও সুনাকের পরেই তৃতীয় স্থানে তার প্রচেষ্টার সমাপ্তি হয়।
হাউস অফ কমন্সের নেতা হিসেবে টরি এমপিদের সঙ্গে তার বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
তাকে কনজারভেটিভ পার্টির ঐকমত্যের নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বরিস জনসন
বরিস জনসন
মাত্র তিন মাস আগে অফিস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও কিছু টোরি এমপি বলছেন যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শীর্ষ পদে ফিরে আসতে পারেন।
কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ চলাকালীন তিনি পার্টির আয়োজন করেন। এই বিতর্কের জেরেই তাকে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হয়।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও জনসনের ঘনিষ্ঠ মিত্র নাদিন ডরিস বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, তিনি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলের সদস্য এবং ব্রিটিশ জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেটসহ একমাত্র এমপি।
বেন ওয়ালেস
বেন ওয়ালেস
টোরি নেতাদের মধ্যে বেন ওয়ালেসকে নিয়ে বিভক্তি থাকলেও বর্তমান এই প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করেন তার সহকর্মী এমপিরা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বেন ওয়ালেস ইউক্রেনকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে তিনি ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের সমর্থক ও ব্রেক্সিটবিরোধী। ব্রেক্সিটবিরোধী হয়েও তিনি ছিলেন বরিস জনসনের সমর্থক এবং ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভা পদে পুরষ্কৃত হন।
রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে তিনি জার্মানি, সাইপ্রাস, বেলিজ ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে সেনাজীবন কাটিয়েছেন।
উত্তর আয়ারল্যান্ডে কাজ করার সময় বেন ওয়ালেস আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির এক বোমা হামলার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়ে আলোচনায় আসেন।
জনসনের পদত্যাগের পরে ধারণা করা হয়েছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু তা না করে তিনি লিস ট্রাসকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান
সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানের পদত্যাগই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিস ট্রাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।
তিনি রুয়ান্ডাতে অভিবাসী পাঠানোর জন্য কাজ করছিলেন। এ ছাড়া তিনি বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি ব্রেক্সিটেরও একজন সমর্থক। ডানপন্থি টোরি এমপিদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
এবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তাকেও একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।